দলীয় সরকারে উপনির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে সম্ভব নয়

29-4

দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন ওই বার্তাই দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন একটি উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে। শনিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ‘কী বার্তা দিল গাইবান্ধা আসনের উপনির্বাচন’ শীর্ষক এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করেন। এ কাজটি রাজনীতিকদেরই করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

গাইবান্ধা-৫ আসনে ১২ অক্টোবর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অনিয়মের কারণে প্রথমে ৫২টি কেন্দ্র, পরে পুরো আসনের সব কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি। সংবাদ সম্মেলনে ওই উপনির্বাচন বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সুজন। একই সঙ্গে অনিয়ম ঠেকাতে পদক্ষেপ না নিয়ে নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গাইবান্ধার উপনির্বাচনে স্পষ্ট হলো দলীয় সরকারের অধীনে একটি উপনির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা সম্ভব না। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সেই বার্তাই দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে-প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সীমাহীন দলীয়করণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে হলে এবং ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে চাইলে সাংবিধানিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।

বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাতটি দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। সেখানে যারা ক্ষমতায় ছিল, যাদের অধীনে নির্বাচন হয়েছে, তারাই ক্ষমতায় অব্যাহত থেকেছে। সেখানে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন উঠেছে। তাই গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন আমাদের বার্তা দিয়েছে-রাজনীতিবিদদের ভেতরে আবারও অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া দরকার যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে মাঠ প্রশাসনে সীমাহীন দলীয়করণ হয়েছে। তাই এজন্য নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতার জন্য নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও হতে পারে আবার সর্বদলীয় সরকারও হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও হতে পারে। এটি ঠিক করবেন রাজনীতিবিদরাই।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট বলা উচিত, তারা যেন সাংবিধানিক কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনেন; যাতে নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার যে ম্যান্ডেট আছে তা প্রতিপালন করতে পারে। একই সঙ্গে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা দরকার। এ ইভিএম ব্যবহারের ফলে আরও বিরাট ঝুঁকির সৃষ্টি হবে, যা আমাদের ভয়াবহ সমস্যার দিকে নিয়ে যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে পারেনি। যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা তাদের জানার কথা। তারা কেন আগ থেকে ব্যবস্থা নিল না? ক্ষমতার রদবদল হবে না, তারপরও একটি আসনের উপনির্বাচন সঠিকভাবে করতে পারেনি। সিসি ক্যামেরা বসিয়ে কিংবা ইভিএম ব্যবহার করে তাদের পক্ষে তিনশ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে আমরা মনে করি। এজন্য সংবিধানে পরিবর্তন এনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের আগে রাজনীতিবিদরা নিজেদের সংশোধন করেন। নির্বাচন কমিশনের বিষয়েও তাদের ঐকমত্য হওয়া দরকার।

গাইবান্ধা-৫ আসনে অনিয়ম বন্ধে ইসি আগ থেকে পদক্ষেপ না নেওয়ায় সরকারের সঙ্গে কোনো যোগসাজশ আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সুজন। এ বিষয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ তোলা এবং অভিযোগের প্রমাণ হিসাবে অনেক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা থেকে সাদা কাগজে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’-এমন প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার নজিরবিহীন পদক্ষেপ সন্দেহকে ঘনীভূত না করে পারে না। এছাড়াও কমিশনের এমন কঠোরতার কারণে জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আর প্রয়োজন নেই-একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্যও জনগণকে সন্দিহান করতে বাধ্য। কারণ, গাইবান্ধা উপনির্বাচনে কমিশনের পক্ষ থেকে কারচুপি উদ্ঘাটনের নজিরবিহীন প্রচেষ্টা এবং ক্ষমতাসীনদের কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ তোলা উভয় পক্ষের জন্যই ‘উইন উইন’-এর মাধ্যমে আউয়াল কমিশন যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ এবং তারা যে ক্ষমতাসীনদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নয়, তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আশা করি, এ বিষয়টি কাকতালীয়। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে এ নাটকের প্রযোজকের কূটবুদ্ধির প্রশংসা না করে পারা যায় না। কারণ, এর মাধ্যমে একই ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

Pin It