ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমছে

আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবির মধ্যে ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

rehab-winter-fair-241219-07

মঙ্গলবার দেশের আবাসন শিল্প খাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন শীতকালীন আবাসন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমানোর বিল আগামী সংসদ অধিবেশনে উঠবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিলটি এখন ভেটিংয়ে আছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি উপস্থাপন করা হবে। “

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাট ও প্লটের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন ব্যয় কমানোর দাবি করে আসছে।রিহ্যাব বলছে, নিবন্ধন ব্যয় কমানো হলে সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তাতে ফ্ল্যাটের ব্যবসা বাড়বে।

ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ফি বর্তমানে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। এই উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেক ক্রেতাই ফ্ল্যাট বা প্লট নিবন্ধনের আগ্রহ দেখান না। তাতে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

আবাসন খাতের মন্দা কাটাতে এ খাতে নিবন্ধন ফি ৬ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে রিহ্যাব।

বর্তমানে ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ৪ শতাংশ গেইন ট্যাক্স, ৩ শতাংশ স্ট্যাম্প ফি, ২ শতাংশ নিবন্ধন ফি, ২ শতাংশ স্থানীয় সরকার কর ও ৩ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিতে হয়।

আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গত বছরের শেষ দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি বৈঠক করে একটি সুপারিশ করেছে কমিটি।

সেই সুপারিশের আলোকেই ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ফি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আবাসন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও এই ফি কমিয়ে আনার দাবি মন্ত্রীর কাছে জানান সংগঠনের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল।

তিনি বলেন, “সংকটময় অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে এই খাতকে বেরিয়ে আসার জন্য এখনও বাধা উচ্চ নিবন্ধন ব্যয়, সব নাগরিকের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা না থাকা ও ব্যাংক ঋণের উচ্চহার। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখা এই আবাসন খাতে নিবন্ধন ব্যয় কমানো গেলে এই খাত অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারবে।”

তাদের দাবির আলোকে নিবন্ধন ফি কমানোর বিল সংসদে ওঠার বিষয়টি তুলে ধরেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী রেজাউল করিম।

একইসঙ্গে আবাসন খাতে প্রতারকদের ঠেকাতে রিহ্যাবকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যারা ভালো ব্যবসায়ী, যারা সততার সঙ্গে আইন মেনে ব্যবসা করেন, তাদের কিন্তু খেয়ে ফেলতেছে টাউট-বাটপার ব্যবসায়ীরা। বুড়িগঙ্গা পার হয়ে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত বা পূর্বাচল পার হয়ে নরসিংদী পর্যন্ত গেলে নয়নাভিরাম চমৎকার সাইন বোর্ড দেখা যায় এবং পত্রিকা ও টেলিভিশনের চাকচিক্যময় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।

”এরা মানুষের, বিশেষ করে প্রবাসীদের টাকা মেরে খাচ্ছে। এরা কিন্তু ভালো যারা ব্যবসা করেন, তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিচ্ছে।”

এদের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করতে রিহ্যাবের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “তাদের ব্যাপারে রিহ্যাব থেকে অ্যাডভাইস আসতে পারে, একটা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কিংবা অন্যভাবে জনগণকে জানাতে পারে যে, এরা কিন্তু রিহ্যাবের মেম্বার না; এদের সঙ্গে কোনো কনট্রাক্টে গেলে নিজদায়িত্বে যান।”

সরকারি প্রকল্পে বিদেশিদের সঙ্গে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে অনুষ্ঠানে জানান রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, “সরকারি প্রকল্পে আমরা বিদেশিদের ইমারত নির্মাণ করতে দিই। আমি ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি, বাংলাদেশে যারা ভালো ভালো ডেভেলপার আছে, আমরা তাদেরকেতো কাজ দিতে পারি। আমরা কেন শুধু বিদেশিদেরকে দিব।

”বিদেশিরা কাজ করে চলে যাওয়ার পরে জবাবদিহিতা থাকে না। বাংলাদেশের কোনো কোম্পানিকে দেওয়া কাজ খারাপ হলে ওই কোম্পানির ব্যবসা-সুনাম ধ্বংস হবে এবং আমরা প্রয়োজনে তাদেরকে ধরতেও পারব।”

তুরাগ তীরের স্যাটেলাইট সিটি, কেরানীগঞ্জ স্যাটেলাইট সিটি, ঝিলমিল প্রকল্পের সম্প্রসারণ, পূর্বাচল ও উত্তরার ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে দেশি কোম্পানিকে সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি থাকবে বলে জানান গৃহায়নমন্ত্রী।

মন্ত্রণালয় ও রাজউকে ঘুষ, দুর্নীতি আর ভোগান্তি কমিয়ে আনা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে দাবি করেন তিনি।

রেজাউল করিম বলেন, “একটা সময় ছিল যখন ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে যেতে অনেক সময় লাগতো এবং উৎকোচ দিতে হতো। আমরা সেখানে টাইম ফ্রেম করে দিয়েছি। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি ফাইলের কাজ শেষ না হয় যার টেবিলে পাওয়া যাবে তার ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।”

রিহ্যাবের সভাপতি কাজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বক্তব্য দেন।

২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলবে রিহ্যাবের এই মেলা। বিভিন্ন অফার নিয়ে মেলায় ১১৫টি আবাসন প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। তাদের সঙ্গে ৩০টি নির্মাণসামগ্রী এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেলা যোগ দিয়েছে।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় দুই ধরনের টিকেট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি; অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকেট প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকেট প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকেট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলা চলাকালে ৫ বার প্রবেশ করতে পারবেন আগতরা।

Pin It