ভিপি নুরের পদত্যাগ চাইলেন জিএস রাব্বানী

dacsu-5decee7eda201

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের পদত্যাগ দাবি করেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী।

রোববার দুপুরে ডাকসুর ছাত্রলীগ প্যানেলের পক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানো এই নেতা। সংবাদ সম্মেলনে রাব্বানী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত ১৬ ছাত্র প্রতিনিধি।

সম্প্রতি ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের দুটি অডিও ক্লিপ শীর্ষ স্থানীয় তিনটি গণমাধ্যম প্রচার করে। সেখানে তাকে দরপত্রের জন্য তদবির করতে ও জনৈক এক ব্যক্তির সাথে আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কথা বলতে শোনা যায়। অডিও ক্লিপটি প্রচারের পরদিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন তার পদত্যাগ দাবি করে মানববন্ধন করে।

সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমরা ডাকসু পরিবার নুরের এই অপকর্মের দায়ভার নিতে রাজি নই। আমাদের আহ্বান থাকবে- নুর যেন তার ডাকসুর ভিপির পদ থেকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করেন। তিনি যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা ডাকসুর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর সভাপতি যেন নৈতিক স্খলনের দায়ে নুরকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা করেন।’

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদচ্যুত হন গোলাম রাব্বানী। তখন তিনি কেন ডাকসু থেকে পদত্যাগ করেননি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওই সময় একটা অভিযোগ ওঠেছিল, আমি আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং আমার নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে সঙ্গে সঙ্গে অব্যাহতি নিয়েছি। এরপরে আমরা বারবার তদন্ত করতে বলেছি এই ঘটনার। এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি কিন্তু গঠন করা হয়নি।’

রাব্বানী বলেন, ‘ডাকসুর জিএস পদ ব্যবহার করে কোনো কাজ করিনি। যদি আমার নামে ডাকসুর জিএস পদ ব্যবহার করে কোনো অনৈতিক কাজ করার অভিযোগ আসে, অবশ্যই আমি আমার জিএস পদ থেকে অব্যাহতি নেব বা পদত্যাগ করব। আর নুরের বিরুদ্ধে ভিপি পদ ব্যবহার করার কিন্তু কোন শুধু অভিযোগ নয়, দালিলিক প্রমাণও রয়েছে, অডিও-ভিডিও রয়েছে।’

এর আগে ডাকসুর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সদস্য রাকিবুল হাসান রাকিব। এতে তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আপামর ছাত্র সমাজের পক্ষে নুরুল হক নুরের প্রতি আহবান জানাই, তিনি যেন নিজের সকল অপকর্ম, ব্যর্থতা, অক্ষমতা স্বীকার করে ডাকসুর ভিপি পদ থেকে আপনাকে পদত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর সভাপতির নিকট আমরা আহ্বান জানাই, ভিপি পদটিকে অপবিত্র, অপব্যবহার করার অপরাধ স্বীকার করে নুর যদি পদত্যাগ না করে, তাহলে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তাকে ডাকসু থেকে বহিষ্কার করা হোক। আমরা একইসাথে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাই, নুরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সর্ম্পকে তদন্তের ব্যবস্থা করা হোক। ডাকসু তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।’

তিনি বলেন, নুর জাতির সামনে শিক্ষার্থীদের লজ্জিত করেছেন। তার জন্য যে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল তা ৯ মাসেও কোন উন্নয়নে খরচ করেননি। এছাড়াও নুরুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ডাকসুতে সময় না দিয়ে লোক দেখানোর জন্য বনানীর অগ্নিকাণ্ডে সেলফি তুলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সোচ্চার, রেজিস্টার অফিসে একাধিক টেন্ডারবাজি, প্রকাশিত ইশতেহারের কোনও কিছুই পূরণ করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিম অর্ণি, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সদস্য রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, তিলোত্তমা শিকদার, নিপু ইসলাম তন্বী, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, মাহমুদুল হাসান, সাইফুল ইসলাম রাসেল ও রফিকুল ইসলাম সবুজ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ আনলে কিছুই হবে না। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ দিতে হবে। আমার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতি, টেন্ডারবাজির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি ভিপি পদ থেকে অবশ্যই পদত্যাগ করব।’

Pin It