যেকোনো সময় নতুন জঙ্গি সংগঠন নাশকতা-হামলা করতে পারে

image-612450-1667560337

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জানিয়েছে, যেকোনো সময় নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নাশকতা-হামলা করতে পারে। এটি হতে পারে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণে। সংগঠনটির নেতৃত্ব পর্যায়ের নির্দেশে তারা নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার লাকসাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠটির অর্থবিষয়ক সমন্বয়ক ও হিজরতবিষয়ক সমন্বয়কসহ ৪ জনকে আটক করে র‌্যাব। আটকরা হলেন- আবদুল কাদের ওরফে সুজন ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল (২৪), ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর (২২), মুনতাছির আহমেদ ওরফে বাচ্চু (২৩) ও হেলাল আহমেদ জাকারিয়া (৩৩)।

তাদের আটকের পর আজ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে আসে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির তথাকথিত হিজরতের ডাকে ঘরছাড়া অর্ধশতাধিক তরুণের এখনও সন্ধান মেলেনি। এ অবস্থায় কোনো নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আটকদের মধ্যে বাচ্চু সংগঠনটির অর্থবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক। সোহেল ও হানজালা হিযরতকৃত সদস্যদের সমন্বয়ক। জাকারিয়া সামরিক শাখার ৩য় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তাদের কাছ থেকে দুটি উগ্রবাদী বই, একটি প্রশিক্ষণ সিলেবাস, ৯টি লিফলেট, একটি ডায়েরি এবং চারটি ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে।

যেকোনো সময় নতুন জঙ্গি সংগঠনটি নাশকতা-হামলার আশঙ্কার বিষয়ে তিনি জানান, আমরা ধরেই নিয়েছি- যেহেতু অনেকেই নিরুদ্দেশ রয়েছে, যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। জঙ্গিদের নাশকতার যে বিষয় রয়েছে, সে ব্যাপারে র‌্যাব ফোর্সের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে।

মঈন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে জঙ্গিবাদ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু এটা নির্মূল হয়নি। আমরা কখনোই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না। যেকোনো সময়ই যেকোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা নাশকতা করতে পারে। এ ধরনের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এখনো আমাদের অনেক সদস্য পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে।

‘যারা স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ রয়েছেন- এমন ৫৫ জনের তালিকা রয়েছে। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে, আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

আটক বাচ্চুর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, তিনি (বাচ্চু) বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন। টাকা প্রাপ্তির পর যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, হয়তো বেশকিছু অস্ত্র প্রশিক্ষণ বা নাশকতার জন্য তাদেরকে দিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে। বাচ্চু দুই ধাপে (একবার ১১ লাখ ও একবার ৭ লাখ টাকা) পাঠিয়েছেন এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। একে-২২ ও একে-৩২ অস্ত্র সরবরাহের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র প্রাপ্তির বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারব।

মঈন আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আরও বলেন, ‘তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়াতি, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, হিজরতকৃত সদস্যদের তত্ত্বাবধানসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত ছিল। ২-৪ বছর আগে পরিচিতদের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সম্প্রতি র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে তারা কুমিল্লার লাকসামে আত্মগোপনে ছিলেন। এ সময়টিতে তারা সদস্য ও সমমনাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন। এরপর সাংগঠনিক প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতেন।

‘এ ছাড়া তারা পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত সদস্যদের পরিবারকেও আর্থিক সহযোগিতা দিতেন। আটক বাচ্চু চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি সংগঠনটির অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিবের অন্যতম সহযোগী এবং অর্থবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। গত ৮-৯ মাসে বিভিন্ন ধরনের ভারি অস্ত্র কিনতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে ১৭ লাখ টাকা, সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রায় ৩০ লাখসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন বাচ্চু।’

আটকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান খন্দকার আল মঈন।

Pin It