রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততায় ভারত সফরে যাননি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী: কাদের

image-111060-1575464840

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘প্রত্যাগত প্রবাসী আওয়ামী ফোরাম’-এর প্রথম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিলের সঙ্গে বয়কটের কোনো বিষয় নেই। বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস একদম দুয়ারে সমাগত। রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে তারা ভারত সফরে নাও যেতে পারেন। তবে পরবর্তী সময়ে যাবেন।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর চিরতরে বাতিল হয়নি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আছে, গঠনমূলক বন্ধুত্ব রয়েছে। কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে দ্বি-পাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। সরকার ভারতের সঙ্গে সমস্যাগুলো যার যার জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায়।

ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাস হওয়া ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। তাদের সংসদে কোনো আইন পাস হলে সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে আমাদের মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তবে যে বিষয়গুলোতে আমরা অ্যাফেক্টেড হই কিংবা প্রতিক্রিয়াটা আমাদের কাছে আসে- অবশ্যই আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে। সেখান থেকে অলরেডি বক্তব্য রাখা হয়েছে। এর বাইরে আমার কোনো ভিন্ন বক্তব্য নেই।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, শুধু এটুকু বলতে চাই- শেখ হাসিনার সরকারই হচ্ছে পঁচাত্তর পরবর্তী একমাত্র সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার। সাম্প্র্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মাঝে মাঝে হয়তো একটি-দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে… এত মানুষ, এখানে কিছু দুর্বৃত্ত আছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার সেই দুর্বৃত্তায়নের চক্রটা ভেঙে দিতে চায়।

তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আসলে কোনো দলীয় পরিচয়ে হয় না। দুর্বৃত্তদের কোনো দল নেই। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বলতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে বর্বরতা হয়েছে সেটাকে বোঝায়। কেবল একাত্তরের বর্বরতার সঙ্গেই এর তুলনা করা চলে।

বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশে আজ আমাদের বিরোধীরা চুপচাপ বসে নেই। সরকার হটানোর জন্য তারা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বিপাকে ফেলার জন্য তারা দ্রব্যমূল্যের ওপর ভর করেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে যাতে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হয়, সেদিকে তাদের একটা যোগসাজস রয়েছে। সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কিছু কিছু বিষয়ে বিরোধী দল থেকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এসব চক্রান্ত মোকাবেলায় নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এরই মধ্যে ২৯টি জেলার সম্মেলনের কাজ শেষ হয়েছে। এত অল্প সময়ে এটা অবিশ্বাস্য, এরপরও করেছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুন করে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনেরও ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা, জাগরণ তৈরি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার বিশাল উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গত কয়েকবছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয়, রপ্তানি ও আমদানি- সবকিছুর সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকেই পেছনে ফেলেছে। বিশেষ করে পাকিস্তান থেকে আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকের উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হ্যাট্রিক বিজয় অর্জন করায় তাকে শুভেচ্ছা জানান ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাঙালি হিসেবে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচিত হওয়ায় রুশনারা আলী, রূপা হক ও আফসানা বেগমকেও অভিনন্দন জানান তিনি।

প্রত্যাগত প্রবাসী আওয়ামী ফোরামের সভাপতি আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

Pin It