রিজার্ভ নিয়ে পালটা জবাব দিলেন মির্জা ফখরুল

image-609932-1666883237

দেশে অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ সরকারের ‘দুর্নীতি’ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘চিবিয়ে নয়, সরকার রিজার্ভ গিলে ফেলেছে।’

পায়রা বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গে টেনে ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন- বিরোধীরা অর্থাৎ বিএনপি বলে যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল? অবশ্যই আমরা জিজ্ঞাসা করতে চাই, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল? তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উত্তর দিয়েছেন, রিজার্ভের টাকা কি চিবিয়ে খায়? আমরা বলছি, চিবিয়ে তো খাননি, রিজার্ভের টাকা গিলে ফেলেছেন।’

‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, পায়রা বন্দরে খরচ করা হয়েছে। কিন্তু পায়রা বন্দরে খরচ করার জন্য রিজার্ভের টাকা না। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে যখন বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করবেন, সেই টাকা ডলারে পরিশোধ করবেন। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে দেশে যখন অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে, তখন সেই সংকট দেখবেন।’

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত যুব সমাবেশে ফখরুল এসব কথা বলেন।

সমাবেশের মঞ্চে দুটি চেয়ার খালি রাখা হয়। একটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং আরেকটিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়।

পায়রা বন্দর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পায়রা বন্দর কার্যকর হতে পারে না। কারণ পানির যে গভীরতা দরকার, সেই গভীরতা সেখানে নাই। সেখানে সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন। এই সুপার ড্রেজারের জন্য আরও সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেখানে আবার চুরির ব্যবস্থা করেছেন।’

‘তিনটা সমাবেশ করে বিএনপি মনে করছে যে ক্ষমতায় চলে যাবে’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যাব বলে মনে করছি না। আমরা মনে করছি, তিনটা সমাবেশ করেই আপনাদের এত কম্পন শুরু হয়েছে যে, সমাবেশগুলো বন্ধ করবার জন্য বাস এবং পরিবহণ ধর্মঘট করাচ্ছেন। লজ্জা করে না। কী নির্লজ্জ আপনারা। কী কাপুরুষ আপনারা যে, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বন্ধ করার জন্য ইউনিয়নকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকছেন।’

ফখরুল বলেন, ‘বরিশালে ধর্মঘট দিয়েছে ৫ দিন আগে। যাতে সমাবেশ পণ্ড করা যায়। রংপুরে ধর্মঘট দিয়েছে, যাতে রংপুরের সমাবেশ বন্ধ করা যায়। বাস মালিক ও শ্রমিকদেরকে বলতে চাই, আপনারা সব সময় জনগণের সেবা করেন। আপনারা এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শক্তি, যারা সব কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে- তাদের সাহায্য করার জন্য এই কাজটা করবেন না। জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণের ভোগান্তি করবেন না।’

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে কোনো ‘খেলা খেলতে’ দেওয়া হবে না বলে ক্ষমতাসীনদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কিসের খেলা হবে? ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলেছেন। তাতেও খেলা হয় না? খেলা তখনই হয় যখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। খেলা তখন হবে যখন সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন। যখন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে তখনই সেই নির্বাচনে খেলা হবে। এ ছাড়া কোনো খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। এদেশের মানুষ আর কখনোই সেটা দেবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘সামনে অনেক কঠিন সময়। সামনে এখন অনেক পরীক্ষা। বর্তমান অবৈধ সরকার গুলি করে আমাদেরকে দমন করতে চায়। আর কী দমন করতে পারবে? তারা নির্বাচন করতে চায়। কিসের নির্বাচন? এদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। এদেশে নির্বাচন নেই। নির্বাচন ব্যবস্থাটাই আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন করেছে, যাকে ডিসি ও এসপিরাই মানে না। সুতরাং তারা নির্বাচন করতে পারে না। তাই নির্বাচনের প্রশ্নই উঠতে পারে না।’

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না ও যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুবদলের মামুন হাসান, কামরুজ্জামান দুলাল, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মওলা শাহিন, ইছহাক সরকার প্রমুখ।

Pin It