২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা বিএনপির

1670671147.mosharraf

আগামী ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। এছাড়া দলের নেতাকর্মীদের ‘গ্রেফতার ও হত্যার’ প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ করারও ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

শনিবার বিকালে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি। যার ভিত্তিতেই আগামী দিনে যুগপৎ আন্দোলন হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই দফা চূড়ান্ত করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দশ দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর হাইকমান্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণসমাবেশে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এদিকে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টায় সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১০টা ২০ মিনিটেই কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।

এর আগে সকাল থেকে বিএনপির জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সভা মঞ্চে উপস্থিত হন।

কী আছে বিএনপির ১০ দফায় ?

রাজধানীর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ১০ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঘোষিত দশ দফায় নতুনত্ব কিছু নেই। গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি জানানো হচ্ছিল, দশ দফায় সেগুলোই তুলে ধরা হয়েছে।

নানা ঘটনা আর নাটকীয়তার পর অবশেষে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে বিএনপি। এতে জাতীয় সংসদ থেকে দলের সাতজন সদস্যের পদত্যাগ ছাড়া আগের ৯টি বিভাগীয় সমাবেশের মতোই বক্তব্য এসেছে বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দশ দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর হাইকমান্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণসমাবেশে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন এবং সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন।

গণসমাবেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শুরু হয়। সকাল থেকে বিএনপির জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সভা মঞ্চে উপস্থিত হন। শনিবার সকাল ১১টায় সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১০টা ২০ মিনিটেই কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১০ দফা ঘোষণা করেন।

যে ১০ দফা ঘোষণা করা হলো-

১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।

৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ওই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।

৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা।

৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা।

৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।

৮. বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।

১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

Pin It