৫০ পেরিয়ে স্যামসাং

30d4b57851670f6fbc8ccd9e1388b634-5d905bbf8318c

দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ বছর আগে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পথচলা শুরু হয়েছিল স্যামসাংয়ের। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে প্রতিনিয়ত মনোযোগী হতে হয়েছে নিত্য নতুন উদ্ভাবনের দিকে। ৫০ বছর পেরিয়ে স্যামসাং এখন আরও নতুন উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্যামসাংয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জেনে নিন কিছু তথ্য:

১৯৩৮ সালের ১ মার্চ নতুন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন লি বিয়ং চল। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘স্যামসাং ট্রেডিং কোম্পানি’। দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েগু শহরে ৪০ জন কর্মচারী, কয়েকটি ট্রাক নিয়ে গ্যারেজে শুরু হয় স্যামসাং কোম্পানির যাত্রা। ১৯৬৯ সালে মূলত স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের পথচলা শুরু হয় ব্যাপক পরিসরে। বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে ৮০ টিরও বেশি ব্যবসা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাপারেল, অটোমোবাইল কেমিক্যাল, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস, কম্পোনেন্ট মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সার্ভিস, ডিআরএম, শিপমেন্ট, টেলি কমিউনিকেশন, ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড হোম অ্যাপলায়েন্স প্রভৃতি। সেবার মধ্যে রয়েছে অ্যাডভারটাইজিং ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস হসপিটালিটি ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি, সার্ভিসেস মেডিকেল হেলথ কেয়ার এবং শিপ বিল্ডিং।

১৯৮০ সালে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস গবেষণা ও উন্নয়নকাজে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। ফলে গড়ে ওঠে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, স্যামসাং কর্নিং, স্যামসাং ইলেকট্রো-মেকানিক্স, স্যামসাং সেমিকন্ডাক্টর এবং স্যামসাং টেলিকমিউনিকেশনের মতো নানা শাখা। বর্তমানে ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারে অন্যদের তুলনায় বেশ এগিয়ে স্যামসাং। ২০১৮ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, স্যামসাং বিশ্বের বৃহত্তম ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ। ২০১২ সালের প্রথম দিকে নকিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল ফোন নির্মাতা হয়ে ওঠে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। ২০১৯ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মূল্যমান ও বিক্রির সংখ্যা বিচারে স্যামসাং বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল ব্র্যান্ড।

স্যামসাংয়ের ডিজিটাল সিটিতে স্যামসাংয়ের অনেকগুলো ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া স্যামসাংয়ের রয়েছে থিম পার্ক। থিম পার্কটির নাম এভারল্যান্ড। যেখানে অ্যাডভেঞ্চার ম্যাজিক থেকে সবকিছু রয়েছে। প্রতিবছর ৭৩ লাখ দর্শনার্থী থিম পার্কটিতে ভ্রমণে আসেন হেভি ইন্ডাস্ট্রির আওতায় সবচেয়ে বড় জাহাজ তৈরি করে স্যামসাং। স্যামসাংয়ের জাহাজ নির্মাণের অঞ্চলটি ৫ হাজার ২০৪ টি ফুটবল মাঠের সমান। এ ছাড়াও স্যামসাংয়ের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৌশল বিভাগ। স্যামসাং টেক শাখা প্রথমবারের মতো তৈরি করেছে ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার, ক্রেন এবং ট্যাংক।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এক দশক পূর্ণ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। হংকংভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, বিক্রির দিক থেকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের বাজারের ২২ শতাংশ দখল করেছে স্যামসাং। গ্যালাক্সি এ সিরিজের স্মার্টফোনগুলো বাজারে সাড়া ফেলেছে।

চলতি শুরুর দিকে সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের জন্য ‘জুনিয়র সফটওয়্যার একাডেমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছে স্যামসাং মোবাইল বাংলাদেশ। এ একাডেমিতে দুটি ব্যাচের আইটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কোডিং, প্রোগ্রামিং, মাইক্রোসফট অফিস, অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স সিস্টেম, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষাসহ অন্যান্য আরও অনেক প্রযুক্তিগত বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।

স্যামসাং হচ্ছে দেশের প্রথম বৈশ্বিক হ্যান্ডসেট কোম্পানি যারা বাংলাদেশে মোবাইল তৈরির কারখানা স্থাপন করেছে। গত বছর স্যামসাং ফোনের দেশীয় পরিবেশক ফেয়ার ইলেকট্রনিকস নরসিংদীতে একটি মোবাইল সংযোজন কারখানা স্থাপন করেছে। স্যামসাং বাংলাদেশ ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস বাদে অন্যান্য সকল সিরিজের হ্যান্ডসেট সংযোজন করছে বাংলাদেশে তাদের নিজস্ব কারখানা থেকে।

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম স্যামসাংকে দেশের শীর্ষ মোবাইল ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া রেফ্রিজারেটর ক্যাটাগরিতে তৃতীয় শীর্ষ ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) প্রতিবেদন বলছে, গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক মূল্যের হিসাবে স্মার্টফোন বিক্রিতে শীর্ষে ছিল স্যামসাং।

Pin It