এবার নজর ডিজিটাল নিরাপত্তায়: পলক

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক দশক ধরে অবকাঠামো তৈরি করার পর এবার ডিজিটাল নিরাপত্তায় জোর দিচ্ছে সরকার।

Palak-2

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, “এবার টার্গেট করেছি, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এক হাজার সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট নিশ্চিত করব।“

গত বুধবার গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাই টেক সিটি ঘুরে দেখার ফাঁকে সঙ্গে বভিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “গত ১০ বছরে যে ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণ করার ছিল, তা হয়েছে। এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করার সময় এসে গেছে।“

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে ২০১৭ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। সেখানে বলা হয়, ২৮ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে ‘খুবই অজ্ঞ’, ২২ শতাংশ ‘অজ্ঞ’, আর ‘সামান্য ধারণা’ রয়েছে ২০ শতাংশের।

এর ঠিক আগের বছরই সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়।

গত কয়েক বছরে একাধিকবার হ্যাকারের কবলে পড়ে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের ওয়েবসাইট। বাদ যায়নি জাতীয় সংসদ ও বেসিসের ওয়েবসাইটও।

সাইবার হামলায় বিশ্বের ১৫০টি দেশের দুই লাখের বেশি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালে, যাকে  ‘নজিরবিহীন’ হিসেবে বর্ণনা করে ইউরোপোল।

দেশে-বিদেশে সাইবার ঝুঁকির এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো হবে বলে জানান পলক।

তিনি বলেন,  ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগ থেকে  কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেন্সপন্স টিম গঠনের পর ২২টি ‘ক্রিটিকাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ শনাক্ত করা হয়েছে।

”আগে আমাদের সাইবার সিকিউরিটির জন্য বিদেশি কনসালটেন্ট ও বিদেশি এক্সপার্টের উপর নির্ভর করতে হত। টিম ও রিসোর্সের সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে তা আর করা লাগছে না।”

প্রতিমন্ত্রী জানান, রেন্সপন্স টিম সেন্সর বসিয়ে ২৪ ঘণ্টা মনিটর করছে। পাশাপাশি পুলিশ, সিআইডি, গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি আইসিটি ডিভিশনকে নিয়ে টিম গঠন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

গত বছর সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পলক।

এখন সিআইডি আর আইসিটি বিভাগের ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক (সিসিএ) কার্যালয়ের আওতায় সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে দুটি ফরেনসিক ল্যাব রয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে আইসিটি বিভাগ ‘কম্পিউটার ইনসিডেন্ট টিম’, ‘সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি’ ও ‘ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব’ নিয়ে নতুনভাবে কাজ করবে বলে জানান পলক।

তিনি বলেন, “হিউম্যান রিসোর্স আর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস, এটা আমরা চলমান রাখব।”

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই টেক সিটিতে জাতীয় ডেটা সেন্টার পরিদর্শন করে প্রতিমন্ত্রী জানান, এ প্রকল্পের ৯৯ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। শিগগিরই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে তারা আশা করছেন।

পরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পলক বলেন, “বাংলাদেশ নিজস্ব এই ডেটা সেন্টারে ৫ পেটাবাইট ডেটা সংরক্ষণ করতে পারবে। প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকার সার্ভিস আমরা ডেটা সেন্টার থেকে দিতে পারব।”

সড়ক ও বিদ্যুৎসহ নানা ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হওয়ার পর বাংলাদেশ এখন ‘ইনফরমেশন সুপারহাইওয়েতে’ সংযুক্ত হতে চায় বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ভারতের আসামে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করছে। থাইল্যান্ডেও ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইন্টারনেটের দাম কমানোর পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে পলক বলেন, ইন্টারনাল ক্যারিয়ার নেশন ওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ের (আইজিডব্লিউ) ভ্যাট যদি পনের থেকে পাঁচ শতাংশে নেমে আসে, তাহলে গ্রাহক পর্যায়েও দাম কমে আসবে।

বিটিআরসি এ বিষয়ে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারটা ওরা নিয়ন্ত্রণ করছে। রুলস, রেগুলেশনসের আওতায় আনার পাশাপাশি ইন্টারনেটের কোয়ালিটি বাড়াতেও তারা কাজ করছে।“

আইসিটি বিভাগের ‘ইনফো সরকার-৩’ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একেবারে দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করার কথাও ভাবছে।

“সরকার ইন্টারনেটে এখন যে বিনিয়োগ করছে, তা হয়ত আগামী ৫ বছরে বুঝতে পারব না। আগামী ১০ বছর পর কিন্তু এটার সুফল পাব। আমাদের লক্ষ্য সরকারের এ মেয়াদের মধ্যে শতভাগ মানুষের কাছে হাই স্পিড, অ্যাফর্ডেবল, রিলায়েবল কানেকটিভিটি পৌঁছে দেওয়া।”

Pin It