প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, কতটা ত্যাগ আর সংগ্রামের পথ পাড়ি দিলে একটি জাতি তাঁর কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারে, তা তাদের জানাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মকে এসব ইতিহাস জানাতে হবে। কত ত্যাগ, তিতিক্ষা, রক্তপাতের মধ্য দিয়ে একটি জাতি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে, বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’ তিনি বলেন, এ বছরই ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিলাভের ২০ বছর পূর্তি হবে।
উনসত্তরের উত্তাল গণ-অভ্যুত্থান এবং বাংলার সংগ্রামী জনতার দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে অভিষিক্ত করারও ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে এসব ঘটনার ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ—এসবের মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবরূপ লাভ করেছে।’
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় জাতি সাড়ম্বরে আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের ইতিহাসকে আমরা আরও স্বচ্ছভাবে দেশের মানুষের কাছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।
’শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নয়, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়েও অনেকে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বই দুটিতে এসব বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মোট ১৪টি খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। এসব দলিলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করেন। যেখানে ১৯৫১ থেকে ৫২ ভাষা আন্দোলনকালীন বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের ওপর পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ হয়েছে।
বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ভারতের বিশিষ্ট বাঙালি কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিসরীয় বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক এবং ‘দ্য ইজিপসিয়ান গেজেট’ পত্রিকার সম্পাদক মহসিন আল আরিশি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী স্বাগত বক্তৃতা দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারজনকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮তে ভূষিত করেন। পুরস্কার হিসেবে ২ লাখ টাকার চেক, ট্রফি এবং সনদ বিজয়ী ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। বিজয়ীরা হচ্ছেন: কাজী রোজী (কবিতা), মোহিত কামাল (কথাসাহিত্য), সৈয়দ মো. শাহেদ (প্রবন্ধ এবং গবেষণা) এবং আফসান চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা)।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সাংসদ, সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিদেশি কূটনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।