প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবু ধাবি সফরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে বড় ধরনের বিনিয়োগের আশা করছে সরকার।
রোববার স্থানীয় সময় বিকালে আবু ধাবির সেন্ট রেগিজ হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব সমঝোতা স্মারক সই হয়।
পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মনে হচ্ছে যে, এটার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ ও ইউএইর মধ্যে ব্যবসার একটা নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যেটা আমরা আগে কখনো দেখিনি।”
জার্মানি সফর শেষে রোববার সকালে মিউনিখ থেকে আবু ধাবি পৌঁছান শেখ হাসিনা। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর।
এরপর সকালে আবু ধাবিতে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ও নেভাল ডিফেন্স অ্যান্ড মেরিটাইম সিকিউরিটি প্রদর্শনীতে অংশ নেন শেখ হাসিনা। দুপুরের পর ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
যেসব সমঝোতা
গভর্নমেন্ট অব দুবাইয়ের সাথে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) চুক্তি। এতে সই করেছেন নৌ পরিবহন সচিব এম আব্দুস সামাদ ও ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, “এটার মুল ফোকাস হল পোর্ট ও শিল্প পার্ক। কারণ ডিপি ওয়ার্ল্ড বলছে, তারা যেখানে পোর্ট তৈরি করে তারা সেখানে পোর্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, শিল্প পার্কও তৈরি করে।
“এখানে একটা ম্যাসিভ বিনিয়োগের কথা তারা চিন্তা করছে।”
প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
আরেকটা সমঝোতা হয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির। এতে সই করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির গ্রুপ সিইও সাইফ আল ফালাসি।
শহীদুল হক বলেন, “এটার মেইন ফোকাস হল- বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি সরবরাহ। পায়রাতে ভূমিভিত্তিক এলএনজি রিসিভং সেন্টার করা। পায়রাতে তারা ৩০০ একর জমি চেয়েছেন, যেখানে এটা করবেন।
“সুতরাং আমরা দেখছি, এলএনজির একটা বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশে যাবে এবং এটা পায়রাতে।”
তৃতীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে আমিরাতের রাজপরিবারের সদস্য ও বিনিয়োগকারী শেখ আহমেদ ডালমুখ আল মাখতুম এবং পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদের মধ্যে। এর আওতায় দুই ধাপে ৮০০ থেকে ১০০০ মেগাওয়াটের এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং ১০০ মেগাওয়াটের আরেকটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।
চতুর্থ চুক্তি হয়েছে মাতারবাড়িতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে। এটাতেও সই করেছেন শেখ আহমেদ ডালমুখ আল মাখতুম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।
শহীদুল হক বলেন, “মাতারবাড়িতে তারা ৩০০ একর জমি চেয়েছে।”
আমিরাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক
রোববার বিকালে আমিরাতের মন্ত্রী, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আজকের বিকেলটাই কেটেছে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে। আমরা যেটা ফিল করেছি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু অফিসিয়ালি বেশ কয়েকবার ইউএইতে এসেছেন, এখান থেকে গেছেন। কিন্তু এই ধরনের আগ্রহ এর আগে তাদের মধ্যে আমরা লক্ষ করিনি।”
বৈঠকে আমিরাতের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রী সুলতান বিন সাইদ আল মনসুরি উপস্থিত ছিলেন।
সচিব বলেন, “একটা নতুন ধরনের অর্থনৈতিক পার্টনারশিপের ওপর ইকোনমিক মিনিস্টার গুরত্বারোপ করছিলেন। উনারা বললেন, বাংলাদেশে উনারা নতুনভাবে ব্যবসা বাড়াতে চান। বিশেষ করে বিনিয়োগ করতে চান। সেটার মূলে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।”
বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইউএইর মধ্যে যৌথ ব্যবসা ফোরাম ও যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, “এতদিন কিন্তু আমরা চাচ্ছিলাম তাদের কাছে এগিয়ে এগিয়ে কিছু করার। তারা এখন এগিয়ে আসছে মনে হচ্ছে। যে কয়টা চুক্তি হয়েছে তার সবগুলোতেই তাদের দিক থেকে প্রচণ্ড আগ্রহ দেখেছি। তারা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়।”
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহেমদ ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।