সরকার পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরাতে উদ্যোগী হলেও মালিকরা তা না মানার বিষয়টি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হবে।
তিন দিন আগের ওই অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের দেখতে শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান প্রধানমন্ত্রী।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমি সহমর্মিতা জানাই। এজন্য জাতীয় শোক পালন করা হবে।”
গত বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে নয়জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে, তাদের অবস্থাও ভালো নয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর চুড়িহাট্টা মোড়ে ওই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে তা আশপাশের পাঁচটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই মোড়ের আশপাশের দোকান আর ভবনে থাকা রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক ও প্রসাধনীর গুদাম চুড়িহাট্টার আগুনকে ভয়াবহ মাত্রা দেয় বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা।
নিমতলীতে ২০১০ সালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর তদন্ত কমিটি পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
নয় বছরেও সেই সুপারিশের বাস্তবায়ন না হওয়ায় চুড়িহাট্টার মত ঘটনা আবার ঘটল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন আগুন লাগল তার আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কারখানা, গোডাউন সরানো হবে। কেউ তখন রাজি হয়নি। আমরা আধুনিক গোডাউন করে দিতে চাইলেও মালিকরা রাজি হননি। দুর্ভাগ্য এটা আমাদের।”
চকবাজারে কেন আগুন লেগেছে তা তদন্ত করে দেখার পাশাপাশি সব স্থাপনায় অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা।
পুরান ঢাকার সংকীর্ণ রাস্তাগুলো নতুনভাবে গড়তে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আগুন লাগার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিস যে গাড়ি নিয়ে আসবে… এত ছোট রাস্তা… তার উপর উৎসুক জনতা ভিড় করে। সবাই এক বালতি করে পানি আর বালি আনলেও ভালো হত। কিন্তু কেউ সেটা আনেনি।”
অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কিছু সংবাদকর্মীর আচরণ নিয়েও আপত্তি জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “যারা আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত, তাদের কিছু টেলিভিশন চ্যানেল প্রশ্ন করছে। এটা কি প্রশ্ন করার সময়? এই জাতীয় ঘটনায় সবাই যেন সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, ৭২ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে আহতদের ছবি তুলতে হাসপাতালে ক্যামেরা যাওয়া, লোকজন যাওয়া বন্ধ করতে হবে।
অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিমসহ ঢাকা মেডিকেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।