প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরে রোববার বিকেলে বন্দর সেরি বেগাবানে বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমানে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীগণ স্থানীয় সময় বিকেল ২টা ৩৫ মিনিটে ব্রুনাইর রাজধানীর বন্দর সেরি বেগাবান বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বিমানবন্দরে ব্রুনাইয়ের যুবরাজ হাজী আল মুহতাদী বিল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হুসেইন উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের
রয়েল গার্ডে’র একটি বিশেষ দল বিমান বন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী যুবরাজকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুসজ্জিত মঞ্চ থেকে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী গার্ড পরিদর্শন করেন।
বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে এম্পায়ার হোটেল এন্ড কান্ট্রি ক্লাবে নেয়া হয়। সফরকালে তিনি এই হোটেলে অবস্থান করবেন।
সফরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী হোটেলটির ইন্দেরা সামুদেরা বলরুমে ব্রুনাই প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। একইদিন তিনি ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার সরকারি বাসভবন ইস্তানা নূরুল ইমানে চেরাদি লায়লা কেনচানায় সুলতান ও রাজকীয় পরিবারের সদস্যবর্গের সঙ্গে মিলিত হবেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইস্তানা নূরুল ইমানে বায়তুল মেশুরায় সুলতানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে সমঝোতা কয়েকটি স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী এস্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে ব্রুনাই ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনুষ্ঠেয় সভায় যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন এবং এ মসজিদে আসর নামাজ আদায় করবেন। শেখ হাসিনা এরপর তার সম্মানে সুলতান আয়োজিত তার সরকারি বাসভবনে ভোজসভায় যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে ব্রুনাইয়ের রাজধানীর জালান কেবাংসানের কূটনৈতিক জোনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। পরে তিনি রয়েল রেজালিয়া যাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
এরপর শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ব্রুনাই থেকে যাত্রা করে সন্ধ্যায় ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন।
সফরকালে বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারকে সাক্ষর করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন খাতে ছয়টি এমওইউ চূড়ান্ত করেছি। একটি এমওইউ বিবেচনাধীন রয়েছে। আমরা বাংলাদেশে ব্রুনাইয়ের বিনিয়োগ আশ্বাস পাবার বিষয়ে আশাবাদী।’
চূড়ান্ত এমওইউগুলো হচ্ছে– কৃষি, মৎস্য, পশু সম্পদ, যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও জ্বালানি খাতে সহায়তা ও সহযোগিতা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সফর খুবই সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং জ্বালানী, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, খাদ্য, আকাশ পথে যোগাযোগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পর্যটন এবং প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করবে। ব্রুনাই ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে কৃষি ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ব্রুনাই। দেশটি ওআইসি এবং আসিয়ানের সদস্য। এ সফরকালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাচ্ছি, আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ব্রুনাই আসিয়ানের সদস্য হওয়ায় এই সফরেও বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পাবে।’