মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দুই হাজার টাকা বাড়ছে

Untitled-1-5ced8ec3ee947

এবার চতুর্থ ধাপে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা আরও দুই হাজার টাকা করে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে অতিরিক্ত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এবারের বাজেটে ওই প্রস্তাব অনুমোদন হলে চলতি বছরের জুলাই থেকে ১২ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা। একইভাবে দুই ঈদে সমপরিমাণ দুটি উৎসব ভাতা এবং ছয় হাজার টাকা বিজয় দিবস ভাতা ও তিন হাজার টাকা নববর্ষ ভাতাও পাবেন তারা। এর আগে তিন দফায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করে সরকার।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে এবার সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ধিত ভাতাসহ অন্যান্য বিষয়ে সব মিলিয়ে চার হাজার ২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে (২০১৯-২০) বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোনো বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই আন্তরিক। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ধাপে ধাপে ১০ হাজার টাকা করেছিল। এখন সেই ভাতা ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করার জন্য এবারের বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৮। ভাতা পাচ্ছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮২ জন। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যরাও মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এ শ্রেণি (পঙ্গুত্বের হার ৯৬-১০০ ভাগ) ৪৫ হাজার, বি শ্রেণি (পঙ্গুেেত্বর হার ৬১-৯৫ ভাগ) ৩৫ হাজার, সি শ্রেণি (পঙ্গুত্বের হার ২০-৬০ ভাগ) ৩০ হাজার টাকা এবং ডি শ্রেণির (পঙ্গুত্বের হার ১-১৯ ভাগ) যুদ্ধাহতরা ২৫ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। এ ছাড়া সাত বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের মাসিক ভাতা ৩৫ হাজার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার মাসিক ৩০ হাজার এবং মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ২৫ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছে।

‘যাচাই ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত হবে না’

যাচাই-বাছাই ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা স্থগিত করা হবে না বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু জাতীয় দৈনিকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বন্ধ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভ্রান্ত্রি দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ও বিব্রত। এ জন্য মন্ত্রীর নির্দেশে বিভ্রান্তি দূর করতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১. ভারতীয় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা; ২. লাল মুক্তিবার্তা তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা (যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই); ৩. বেসামরিক গেজেট: (ক) বেসামরিক গেজেট; (খ) মুজিবনগর গেজেট; (গ) বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গেজেট; (ঘ) বিসিএস গেজেট; (ঙ) স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক গেজেট; (চ) বীরাঙ্গনা গেজেট; (ছ) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গেজেট; (জ) ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী গেজেট; (ঝ) বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত/ দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা গেজেট। ৪. বাহিনী গেজেট :(ক) সেনাবাহিনী গেজেট; (খ) বিমানবাহিনী গেজেট; (গ) নৌবাহিনী গেজেট; (ঘ) নৌ-কমান্ডো গেজেট; (ঙ) বিজিবি গেজেট; (চ) পুলিশ বাহিনী গেজেট; (ছ) আনসার বাহিনী গেজেট তালিকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা অব্যাহত থাকবে।

তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গত ২৪ এপ্রিলের পরিপত্র অনুযায়ী মহানগর/উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি (‘গ’ তালিকা) যাদের আবেদন ‘নামঞ্জুর’ করেছেন সেসব মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা স্থগিত থাকবে।

অবশ্য ভাতা স্থগিত হওয়া এসব ব্যক্তি আগামী ৩০ জুনের মধ্যে মন্ত্রলালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে আপিল করতে পারবেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

Pin It