মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে দেরির জন্য আদালতকে কারণ দেখিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আবার সাধারণ মানুষের উপর ‘চাপ পড়বে’ বলে মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলেও দাবি করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু এবং আওয়ামী লীগের শামীম ওসমানের দুটি প্রশ্নের জবাবে এই উত্তর আসে মন্ত্রী জব্বারের।
মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোন ও রবির কাছে সরকারের পাওনা রয়েছ। এই পাওনা আদায়ের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর সর্বশেষ পদক্ষেপটি হচ্ছে তাদের ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি দুঃখজনক যে আমরা যখন কোনো অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাই- তারা আদালতে গেলে পুরো প্রসেসটাই বিলম্বিত হয়ে যায়। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই বকেয়াটা রয়ে গেছে।”
টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির দাবি, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং আরেক মোবাইল ফোন অপারেটর রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।
তবে যে নিরীক্ষার ভিত্তিতে এই অর্থ চাইছে বিটিআরসি, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে কোম্পানি দুটির।
জব্বার বলেন, “অপারেটরদের মধ্যে দুটির অডিট হয়েছে এবং অন্য যারা আছে তাদেরও অডিট হবে। পাওনা আদায় করার জন্য কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
শামীম ওসমানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “গ্রামীণ বা রবিসহ বাংলাদেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট অপারেশনে যেসব সংস্থাগুলো কাজ করে, তারা সরকারকে বিভিন্নভাবে যে কর দেয়, তা তাদের গ্রস রেভিনিউর শতকরা প্রায় ৫০ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ১০০ টাকা তারা রেভিনিউ গ্রস হিসেবে আয় করে, তার অর্ধেকটা সরকারের রাজস্ব খাতে এমনিতেই যায়।
“আমরা অডিট করতে গিয়ে গ্রামীণ ও রবির ক্ষেত্রে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি যে এই পাওনাটা হচ্ছে প্রচলিত পদ্ধতিতে তারা যেভাবে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে আসছিল, তার বাইরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর ফাঁকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। অডিট করতে গিয়ে এই কর ফাঁকির বিষয়টি উদ্ধার করা হয়েছে।”
মন্ত্রী বলেন, “এক্ষেত্রে গ্রামীণের কথা উল্লেখ করতে গেলে বলা যায়- তাদের কাছে মূল পাওনা আসলে চার হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু যেহেতু তারা এই কর দেয়নি তাই সারচার্জ ও সুদ সবকিছু মিলিয়ে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় দিয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সরকার চাইলেও পাওনা আদায়ে কঠোর হতে পারছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পাওনা অর্থ আদায় করার জন্য সরকার যে পরিমাণ কঠোর ব্যবস্থা করার তা করব। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়- সেটি হচ্ছে, ধরা যাক অর্থ প্রদান না করার জন্য গ্রামীণের লাইসেন্স বাতিল করে দিলাম। কিন্তু এতে চাপটি পড়বে দেশের জনগণের উপর। ফলে জনগণের ব্যবস্থাটি সঠিক রেখেই তারপরে যেন আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারি, সেটি চিন্তা করতে হয়।”
মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের এক প্রশ্নের জবাবে জব্বার বলেন, “এটা আমাদের উপলব্ধি করার বিষয় হওয়া উচিৎ যে টেলিটকের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কী কারণে সমকক্ষতা অর্জনের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। বরং বাংলাদেশের মোবাইল মার্কেটের তলানিতে বসে আছে। একটু তুলনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে যে গ্রামীণ ফোন বাংলাদেশে ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আর গত বছর পর্যন্ত আমি হিসেব নিয়ে দেখেছি টেলিটকের বিনিয়োগ ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।”
তবে টেলিটকের দুর্বল অবস্থা কাটিয়ে ওঠার আশা রেখে জব্বার বলেন, বেশ কয়েকটি দেশ সংস্থাটিতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে।
“এক্ষেত্রে যার সাথে হ্যান্ডশেক করা সুবিধাজনক হবে, নিশ্চয়ই আমরা গ্রহণ করবো। একই সাথে বিটিসিএল এর যেসব প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে তাতে টেলিকটকে সম্পৃক্ত করা গেলে এতে উভয় প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে। এই বিষয়ের প্রতি আমরা নজর দিচ্ছি।”