জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেছেন, এনআইডি জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এ জালিয়াতি বন্ধে যা যা দরকার, তার সবই করা হবে। ইতিমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে সন্দেহভাজন ১৫ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সাংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আমাদের মূল ডেটাবেজ সুরক্ষিত আছে। যারা এটায় ঢোকার অপচেষ্টা করেছিল তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইটি বিভাগ এই অপচেষ্টাকারীদের চিহ্নিত করেছে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। এটা বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সিআইডি, দুদক, এসবির সহায়তা নেব।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এর সঙ্গে কতজন জড়িত। তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার স্বার্থে আমরা এখনই তাদের নাম প্রকাশ করছি না। তবে এই সংখ্যা ১৫ জনের বেশি না। আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের নাম প্রকাশ করব।
দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়ে মহাপরিচালক বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের ৬১ জনের তালিকা পেয়েছি। তাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তারা কীভাবে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করল, কারা তাদের সহযোগিতা করল- এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে ইসির চারটি ও বিভিন্ন সময় আরও তিনটি ল্যাপটপ হারিয়েছিল। তবে সার্ভারে প্রবেশের জন্য ইসির নির্ধারিত পাসওয়ার্ড ও মডেম থাকতে হয় বলে ওই ল্যাপটপগুলো দিয়ে সার্ভারে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম আরও বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধের কারণে যারা ইসি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছে, তাদের তালিকা করে আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছি, যাতে কোনোভাবেই অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেওয়া না হয়। ডেটা এন্টি অপারেটর হিসেবেও যাতে তারা নিয়োগ না পায় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুতদের আমরা কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখছি।
তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা দুদকের সহযোগিতা নেব। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ব্যাপারে যাদেরই সম্পৃক্ততা পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এটা অব্যাহত থাকবে। যদি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে হয় সেটাও করব।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক জানান, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে ইসি কর্মকর্তাদের বদলি করা হবে, যাতে তারা একই জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করতে না পারে। সেই সঙ্গে নিবন্ধন কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড যাতে অন্যরা ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য কড়া নজরদারি করা হবে। যদি কেউ হস্তান্তর করে তাহলে সেই ব্যর্থতার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা কোনোভাবে ভোটার হতে পারবে না। কারণ সব ভোটারের হালনাগাদ তথ্য ২০২০ সালের ২ জানুযারি খসড়া আকারে প্রকাশ করা হবে। সব যাচাইবাছাই করেই মূল সার্ভারে যাবে ডেটা। সেক্ষেত্রে ডেটাবেজ নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। তথ্যভাণ্ডার পুরোপুরি সুরক্ষিত।
সংবাদ সম্মেলনে ইসির এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন, ইসির আইসিটি মেনটেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ হোসেন, ৫ সদস্যের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির প্রধান এনআইডি উইং পরিচালক খোরশেদ আলম, কারিগরি বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রধান এনআইডি পরিচালক ইকবাল হোসেন ও সদস্য এনআইডি উইংয়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাহাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি এক রোহিঙ্গা নারী ভুয়া এনআইডি সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাসপোর্ট নিতে গিয়ে ধরা পড়েন। এরপর জালিয়াত চক্রের খোঁজে নামে ইসি। রোহিঙ্গা সন্দেহে অর্ধশত এনআইডি বিতরণ আটকে দেয় ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগ।
ইসি সূত্র জানায়, ২০০৭-২০০৮ সালে ইসির ব্যবহৃত কিছু অকেজো ল্যাপটপ নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই সময় আরও অন্তত পাঁচটি ল্যাপটপ হারিয়ে যায়, যার দুটি জালিয়াত চক্রের হাতে পড়ে বলে তদন্ত দল ধারণা করছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে দুই দালালকে আটকের পর তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে সেই ল্যাপটপ দুটির একটি উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ল্যাপটপসহ মোস্তফা ফারুক নামে এক অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফারুক বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অধীনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে কাজ করেছিলেন।