পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠক শেষে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের, যা পূরণ করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের কারণে বন গেছে, গাছ নেই, পশুপাখিসহ ধ্বংস হয়েছে জীববৈচিত্র্য। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্যহাতি। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের জন্য আর এক ইঞ্চি বনভূমিও দেয়া হবে না। তাই কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য পাহাড় কাটলে সংশ্লিষ্ট এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার কক্সবাজারে সংসদীয় কমিটির এই বৈঠক হয়। সংসদীয় কমিটির বৈঠক সাধারণত রাজধানীতেই হয়ে থাকে। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় প্রায় ১০ হাজার গভীর নলকূপ থেকে প্রতিদিন পানি তোলা হচ্ছে। ফলে পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নামছে। এতে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। আগামীতে এই এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, উখিয়া ও টেকনাফ মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের জন্য আর এক ইঞ্চি বনভূমিও দেয়া হবে না। এই বিষয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সাবের চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যাপক হারে পাহাড় কাটা হয়েছে। যারা পাহাড় কাটবে তাদেরও রেহাই নেই। এনজিওরা পাহাড় কাটায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় ৬৩টি হাতি রয়েছে। হাতির আবাস স্থলের চারিদিকে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা বসতি। তাই হাতিগুলো বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এসব হাতি সুরক্ষায়। হাতির নির্বিঘ্ন যাতায়তের জন্য করিডোর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়েছে এবং ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপনের জন্য সংসদীয় কমিটির সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী মাসে প্রতিবেদন দেবে।
বৈঠকে উপস্থিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, সরকার পরিবেশ সুরক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পাহাড় কাটা, বন ধ্বংস করাসহ কোনোভাবে পরিবেশের ক্ষতি করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষা হলেই মানুষসহ সমস্ত প্রাণিকূলের সুরক্ষা হবে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, স্থায়ী কমিটির সদস্য জাফর আলম এমপি, আনোয়ার হোসেন এমপি, মোজাম্মেল হোসেন এমপি, নাজিম উদ্দিন এমপি, রেজাউল করিম বাবলু এমপি, বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এমপি প্রমুখ।