রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ড

parvez2-5df8864467c76

পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ইসলামবাদের বিশেষ আদালত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে এ ধরনের রায়ের ঘটনা এই প্রথম।

বিশেষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এই রায় দেন। আলোচিত মামলাটির যুক্তিতর্কের ওপর শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হয়।

ডনের অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সামরিক প্রধান পারভেজ মোশাররফ এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দু্বাইয়ে অবস্থান করছেন। সাবেক সামরিক এই স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। মামলাটি ২০১৩ সাল থেকে চলে আসছে।

২০১৪ সালের ৩১ মার্চ মোশাররফকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিশেষ আদালতের কাছে বিচারের জন্য সব তথ্যপ্রমাণ পেশ করা হয়। তবে আপিল ফোরামে মামলাটি তোলার পর বিচারকাজ দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ে এবং মোশাররফ ২০১৬ সালের মার্চে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যান। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাঁকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

পারভেজ মোশাররফ সামরিক ক্যুর মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

মামলাটির ক্ষেত্রে বিশেষ আদালতকে ছয়বার পুনর্গঠন করা হয়।

বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, এ মাসের শুরুতে হাসপাতালের বিছানা থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এই মামলাকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন পারভেজ মোশাররফ।

তিনি প্রথম কোনো সামরিক শাসক, যিনি সংবিধান লঙ্ঘন করার জন্য বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।
২০০৭ সালের নভেম্বরে তিনি দেশটির সংবিধান বাতিল করে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এর বিরুদ্ধে ওই সময় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। অভিশংসনের ঝুঁকি এড়াতে তিনি ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন।

১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় বসেন। নওয়াজ শরিফ ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে জেনারেল মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার উদ্যোগ নেন। মোশাররফ এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে যুক্তি তুলে ধরেন, ২০০৭ সালে সরকার ও মন্ত্রিপরিষদের সম্মতিতে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। তবে তাঁর যুক্তি আদালত খারিজ করেন দেন এবং তাঁর কার্যকলাপকে অবৈধ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে, কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অভিযোগ উঠলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। জেনারেল মোশাররফ ২০১৬ সালে দুবাইয়ে অবস্থান করার পর একাধিকবার আদেশের পরও তিনি আদালতে হাজিরা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

২০১৪ সালে জেনারেল মোশাররফকে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত করার ঘটনাটি দেশটির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।

Pin It