এই আইন নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নিশ্চিতভাবে এটি একটি কালো আইন। এই আইনটা করে তাদের (সরকার) যে দুরভিসন্ধি এটাকে আইনি বৈধতা দিচ্ছে। দুরভিসন্ধিটা হচ্ছে তারা তো অর্থনীতিকে একেবারে দেউলিয়া করে ফেলেছে।

“…এই আইন থেকে এটাই প্রমাণিত হল, সরকার সবখান থেকে টাকা নেওয়া শুরু করেছে। এটা দুর্নীতির একটা অংশ বলতে পারেন। কারণ এই অর্থগুলো ব্যবহার করবে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে, মেগা প্রজেক্টের ক্ষেত্রে যেখানে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে।”

বুধবার বিএনপির পাশাপাশি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের তুমুল বিরোধিতার মধ্যে জাতীয় সংসদে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক, নন-ফাইনানশিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান’ আইন পাস হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভায় এই আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

সরকারের ব্যাংক ঋণের ভার অনেক বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর স্থিতিতে থাকা ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা উন্নয়নের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা থেকে ওই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনতেই এই আইনটি করার উদ্যোগ নেয় সরকার।

অর্থনীতির ছাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনি দেখেন, সরকারের কতটা দেউলিয়াত্ব হয়ে গেছে। এই যে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো আছে অতীতে ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার কখনোই টাকা নেয়নি। প্রত্যেক অটোনোমাস বডিজ তার নিজস্ব ফান্ড তৈরি হয়েছে, সেই ফান্ডের আরও উন্নতি হয়েছে, ওই সব সংস্থার বিভিন্ন প্রজেক্টগুলো তারা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করেছে এবং একই সঙ্গে আরও বিস্তার লাভ করেছে।

“আজকে যেসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো তারা কিছুটা প্রফিট করে অর্থ জমা করেছে সেখান থেকে যদি সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে মেগা প্রজেক্টে খরচ করা হয় সেখানে দুর্নীতিকে আরও প্রশস্ত করা হচ্ছে।”

দেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “একমাত্র প্রবাসীদের আয় রেমিটেন্স ডলারের হিসেবে কিছুটা পজিটিভ দেখা গেছে। তাছাড়া বাকি সবগুলো খাতের সূচক নেগেটিভ। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় সমস্যা রপ্তানি আয় কমে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে গার্মেন্ট খাত যার ওপর আমাদের সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয় সেখানকার অবস্থা খুব খারাপ।

“গতকালই একজন বেশ বড় গার্মেন্ট উদ্যোক্তার সাথে কথা হচ্ছিল, তিনি বললেন যে, তারা খুব কষ্টের মধ্যে, আতঙ্কের মধ্যে শিল্প পরিচালনা করছেন। বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়ানো হয়েছে সেই সাথে আন্তর্জাতিক যে নেগেটিভ অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেই অবস্থায় ইন্ডাস্ট্রিগুলো বাঁচিয়ে রাখাই হচ্ছে তাদের বড় সমস্যা। এটা আস্তে আস্তে নিচের দিকেই নামছে। এটা অর্থনীতির জন্য বড় অশনি সংকেত। অর্থনীতিতে একটা আশঙ্কা আছে যে, যে কোনো সময়ে ধস নেমে যেতে পারে।”

‘ভোট ডাকাতি করেছে’

ঢাকার  দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা ইভিএম দিয়ে ‘ভোট ডাকাতি’ করেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

“এর প্রমাণ আমরা একেবারে মেশিনে দেখিয়ে দিয়েছি। এখন আপনি দেখবেন যে, নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো থেকে যে রিসিপ্ট পেপার পাওয়ার কথা সেই রিসিপ্ট পেপার এখনও কেউ পাইনি। দেখবেন যে সেগুলোতে এতো গরমিল যে এটা ইভিএমে চিন্তাই করা যায় না।”

নির্বাচন কমিশন এক ঘণ্টার কথা বললেও ফল ঘোষণায় আট ঘণ্টা লাগা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যেহেতু মেলাতে পারেনি, বহু জায়গায় গরমিল রয়েছে সেজন্য ৮ ঘণ্টা সময় নিয়ে ফলাফল বিকৃত করেছে।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের সঙ্গ কথা বলার সময় রিয়াজউদ্দিন নসু ও শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।