খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবই: ফখরুল

bnp-samakal-5e3eb69ccb43f

দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন একসঙ্গে করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি শীর্ষ নেতারা।

তারা বলেছেন, সম্পূর্ণ প্রতিহিংসা বশবতী হয়ে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মতো নেতাকে বন্দি করে রেখেছে, তাদেরকে জনগণ কখনো ক্ষমা করবে না। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের পতন ঘটাতে হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারের মতো রাজপথে নেমে আসুন।

দলের একজন নেতাকর্মীকেও ঘরে বসে না থাকার আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেছেন, এখন আমাদের একটাই কথা- গণআন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে অবৈধ সরকারকে বাধ্য এবং সব অধিকার ফিরিয়ে দিতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে তার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে দলের নেতারা এসব কথা বলেন। একই দাবিতে সমাবেশ থেকে আগামী শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সারাদেশের সব জেলা ও মহানগরীতে সমাবেশ করেছে বিএনপি।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। দুই বছরেও দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে ‘কার্যকর’ কোন আন্দোলন ও আইনি উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাঠগড়ায় রয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ পরিস্থিতিতে শনিবারের সমাবেশের দিকে নজর ছিল দেশবাসীর। পুলিশ শেষমুহূর্তে অনুমতি দেওয়ায় ব্যাপক প্রস্তুতি ও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমবেত হতে পারেননি বক্তব্যে জানান নেতারা।

নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে খোলা মঞ্চ নির্মাণ করে সমাবেশ করা হয়। মঞ্চের পেছনে বিশাল ব্যানারে খালেদা জিয়ার বড় প্রতিকৃতি ছিল।

সমাবেশকে ঘিরে দুপুরের পর থেকেই ফকিরেরপুল মোড় থেকে বিজয়নগরের নাইটেঙ্গেল রেঁস্তোরার মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক দুই পাশে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঢল নামে। বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে মিছিলে মিছিলে সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নানা শ্নোগানের পাশাপাশি সিটি নির্বাচনে ভোটচুরির অভিযোগ এনেও শ্নোগান দেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবই এবং সরকারকে বাধ্য করবো তাকে মুক্তি দিতে। এটাই এখন তাদের একমাত্র কাজ। তিনি কারাগারে গুরুতর অসুস্থ। দুই বছর অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি না দিলে জনগণের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যাবেন।

দেশে বিচার বিভাগ রয়েছে বলে মনে হয় না অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যেখানে একজন প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নল দেখিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলায় সঠিক রায় দেওয়ায় একজন বিচারপতিকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে, যেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনকে তার প্রাপ্য জামিন থেকে বছরের পর বছর বঞ্চিত করা হচ্ছে- সেখানে বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে পারে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের প্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। অর্থনীতিকে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির সকল সূচক এখন তলানীতে অবস্থান করছে। এটা তার কথা নয়, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য। গার্মেন্ট শিল্পে ধস নেমেছে। রপ্তানি খাত আরো নিচে অবস্থান করছে। কিন্তু এই সরকারের দুর্নীতি বন্ধ হয় নাই। তারা তাদের দুর্নীতির মহোৎসব চালু রাখতে বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বারবার বৃদ্ধি করেছে। দুর্নীতির জন্য দ্রব্যমূল্য এখন আকাশচুম্বী। এ অবস্থায় বিএনপির কিছু করা লাগছে না। তাদের দুর্নীতির কারণেই জনগণ তাদের শেষ করবে।

সিটি নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ ভাগ ভোট পেয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় না। অবিলম্বে সিটি নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচন দিন। একইভাবে যেভাবে দেশের জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, সেই নির্বাচন বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আর সকলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন দিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য গায়ের জোরে শুধু খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখে নাই, পুরো দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। সরকার ভীত হয়ে খালেদা জিয়ার ন্যায্য আইনি অধিকার জামিনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা এটা করছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র এখন আওয়ামী লীগের বাক্সবন্দি। এ অবস্থায় বিএনপিকে দুটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে। এর একটি সরকারের পতন। আরেকটি খালেদা জিয়ার মুক্তি। এই দুটি আন্দোলন একসাথে করতে হবে। তাদেরকে আন্দোলনের প্রস্ততি নিতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার কারণে খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। এটা চিরদিনের ব্যবস্থা নয়। দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য আগেও আন্দোলন করেছে, গণতন্ত্র পতিষ্ঠা করেছে। আগামীতেও করবে। এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি পাবে, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে, মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। তারা তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, দেশের যত ন্যাক্কারজনক ইতিহাস তা এই আওয়ামী লীগের। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে যার যার এলাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী করুন, সংগঠিত হোন। নিজেদের মধ্যে কোন বিভেদ রাখবেন না। এই সরকারকে রুখতে হবে। এর কোন বিকল্প নাই।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী হওয়ার কারণে খালেদা জিয়াকে আজ কারাগারে রাখা হয়েছে। তাকে মুক্ত করতে বিএনপি আন্দোলন করতে পারছে না সরকারের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ছাড়া মাঠে নামুন। দেখবো- কে মাঠে থাকতে পারে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের কোন বিকল্প নাই। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। হয় তাকে মুক্ত করবো, নয়তো আমরা সবাই তার কাছে চলে যাবো।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ন্যায্য বিচারের আশায় দৌড়ালে তার মুক্তি হবে না, দেশের মুক্তি মিলবে না। তার মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে হবে। তিনি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না-এটা আমাদের অঙ্গীকার।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুই বছর কোন আন্দোলন করি নাই। আন্দোলনকে সংগঠিত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।

ঢাকা উত্ত সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তাবিথ আউয়াল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে মুক্তিকামী জনগণ প্রস্তুত। সমস্ত দেশ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশবাসী তাদের নেত্রীর মুক্তি চান। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ইশরাক হোসেন বলেছেন, সরকার সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করেছে। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নাই। তিনি মুক্তি পেলে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় সমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, শাসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, ফজুলর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অসুস্থতার জন্য বক্তব্য রাখতে পারেননি।

সমাবেশে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিনসহ শিরিন সুলতানা, এহছানুল হক মিলন, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Pin It