ধর্ষণের পর খুন করে আযান, ফজরের ইমামতি

image-140144-1585238759

গফরগাঁওয়ে পাড়াভরট গ্রামের কিশোরী তাকমীন হত্যার তিনদিন পর মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে এ খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে মাহফুজ ওরফে ইছামুদ্দিন (১৮) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। মাহফুজ উপজেলার রাওনা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র।

তাকমীনের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আঠারদানা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র মোঃ আশিকুল হকের সঙ্গে পাড়াভরট গ্রামের আব্দুল মতিনের কিশোরী কন্যা তাকমীনের (১৬) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিকুল হক নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের আইনাল হকের ছেলে।

তাকমীন বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে আশিকুল মোবাইল করে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ আঠারদানা জামে মসজিদের কাছে তাকমীনকে ডেকে নেয়। এ সময় সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল আশিকুলের বন্ধু পুলিশের হাতে আটককৃত মাহফুজ ও একই মাদ্রাসার ছাত্র নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের সাইদুলের ছেলে আরিফ (১৮)। সেখানে যাওয়ার পর আশিকুল তাকমীনকে ধর্ষণ করে। পরে মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ও আশিকুল তার মাথার পাগড়ী দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে। আশিকুল, মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের লাশ টেনে, হিঁচড়ে মসজিদের লাশ একটি জামগাছের ডালের তাকমীনের ওড়না দিয়ে বেঁধে রাখে। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দেয়ার সময় হলে মসজিদের মোয়াজ্জিন আশিকুল আজান দেয়। মুসল্লিরা মসজিদে আসলে ফজরের নামাজের জামাতে আশিকুল ইমামতি করে। এ সময় মুসল্লিদের সাথে মাহফুজ, আরিফও নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তাকমীনের লাশ একটি জামগাছের ডালের সঙ্গে বাধা অবস্থায় দেখতে পায়। কিশোরীর লাশটি গাছের ডালের সাথে ওড়না দিয়ে গলা বাধা ছিল। তাকমীনের পরিধেয় বস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল। তার পা মাটিতে ছিল। লাশের সঙ্গে একটি মোবাইল পড়ে ছিল। মুসল্লিরা লাশটি দেখতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েলের মাধ্যমে থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করে । পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

ময়মনসিংহ সিআইডির ক্রাইমসিন প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্ব সিআইডির একটি বিশেষ টিম এবং গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকারের নেতৃত্বে থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল মঙ্গলবার সারাদিন ঘিরে রাখে । মঙ্গলবার বিকালে তাকমীনের বাবা আব্দুল মতিন বাদী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। বৃহস্পতিবার সকালে গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকার ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আহসান হাবীবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহফুজকে আটক করে।

আঠারদানা জামে মসজিদের মুসল্লী ও পাড়াভরট গ্রামের খাহে আলী মন্ডল (৬৪) জানায়, ঘটনার দিন মঙ্গলবার ফজরের নামাজের আজান দেয় ও ইমামতি করে মোয়াজ্জিন আশিকুল হক। বুধবার দুপুর থেকে সে পলাতক রয়েছে।

আঠারদানা জামে মসজিদের ইমাম মোঃ মোজাম্মেল হক (৪৭) জানায়, ওইদিন মসজিদে যেতে দেরী হওয়ায় আশিকুল ইমামতি করে। নামাজ শেষে একটু আঁধার কাটলে মসজিদের মুসল্লিরা মসজিদের কাছে জামগাছের নীচু ডালে বাধা একটি মেয়ের লাশ দেখতে এবং লাশটি শনাক্ত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানায়।

তাকমীনের ছোট বোন সুমাইয়া (১৩) জানায়, তার বোনে রাতে তার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল। সে গোপনে মোবাইল ব্যবহার করতো। মোবাইল ফোনটি হয়তো আশিকুলের দেয়া। গফরগাঁও সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জানান, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি । জড়িতদের গ্রেফতারের স্বার্থে এখন বাড়তি কিছু বলা যাবে না।

Pin It