বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

MUJIB_DIBOSH20200417002148

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর এই দিন স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ১০ এপ্রিল গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এ সরকারকেই বলা হয় ‘মুজিবনগর সরকার’। এ সরকারের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। এ কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মুজিবনগর দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৭১ সালের এইদিন তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার সদসরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ঘোষিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এই দিন থেকে এই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে।

বাঙালির ওপর চেপে বসা পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ অতিক্রম করে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এর আগে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। এর পর ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণার পরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। শুরু হয় মুক্তিয্দ্ধু। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হয়।

এর পর ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়া এই মুজিবনগর সরকারের ঘোষণাপত্রে দেশের সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তাজউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। এই সরকারের উপদ্ষ্টো হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ। এছাড়া জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।

বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার নির্দেশিত পথ অনুযায়ী এই মুজিবনগর সরকার সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। সদ্য জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রের নবগঠিত সরকারের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে।

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয় ৩০ লাখ মানুষ। নির্যাতনের শিকার হন ২ লাখ নারী। বিজয় অর্জিত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

এ বছর বিশ্বজুড়ে নভেল করেনা ভাইরাসের মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মুজিবনগর দিবসে কোনো কর্মসূচি থাকছে না।

Pin It