করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যেও হাওরাঞ্চলের ৪৪ শতাংশ ধান কৃষকরা কেটে ইতোমধ্যে ঘরে তুলেছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক শনিবার এক ভিডিও বার্তায় একথা জানিয়েছেন বলে রাতে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “কৃষি মন্ত্রণালয়ের নানান উদ্যোগের ফলে হাওরের কৃষকেরা ভালোভাবে ধান কাটতে পারছে, ইতোমধ্যে ৪৪ শতাংশ ধান কর্তন করে ঘরে তুলতে পেরেছে।
“অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বা আগাম বন্যা না হলে যে গতিতে ধান কাটা চলছে, আমরা আশাবাদী হাওরের কৃষকেরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে পারবে।”
এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগ আসবে হাওরাঞ্চল থেকে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “পরিবহন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হাওরাঞ্চলের ধান কাটার জন্য আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসেছে। শ্রমিকের পাশাপাশি হাওর এলাকায় ধান কাটার জন্য কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে পুরোদমে ধান কাটা চলছে।
“ব্রি ২৮ জাতের ধান আগে পাকে, এটি কাটা প্রায় শেষ হয়েছে। ব্রি-২৯ জাতের ধান এখনও পাকে নাই, আরও ৭-৮ দিন সময় লাগবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এই সাতটি জেলায় শুধু হাওরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে।
এরমধ্যে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত কাটা হয়েছে এক দশমিক ৯৮ লাখ হেক্টর জমির ধান, যা মোট ধানের ৪৪ শতাংশ।
সিলেটে ৫৩ শতাংশ, মৌলভীবাজারে ৫৪ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৩৭ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ৪৮ শতাংশ, নেত্রকোণায় ৫৬ শতাংশ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৬ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “হাওর এলাকায় ৩ লাখ ৯ হাজার ২৪৪ জন শ্রমিক, ৩৫৯টি কম্বাইন হার্ভেস্টার এবং ৪৪২টি রিপার ধান কর্তনের কাজে নিয়োজিত আছে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্বে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই খাদ্য উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আশা করি কৃষি উৎপাদন ও বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে পারব। বাংলাদেশে খাদ্যের সংকট যাতে না হয়, সেজন্য যা যা করা দরকার, আমরা সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
“আমরা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা তাদেরকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি সার, বীজ, বালাইনাশক, সেচসহ সমস্ত উপকরণের নিশ্চয়তা দেব।”
কৃষকদের ধান ঘরে তোলায় সহযোগিতা করায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন, জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জেলা/উপজেলা/ইউনিয়ন কৃষি বিভাগকে ধন্যবাদ জানান কৃষিমন্ত্রী।
এছাড়া কৃষকলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষক এবং নানা শ্রেণি-পেশার যারা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন তাদেরও ধন্যবাদ জানান রাজ্জাক।