করোনা পরীক্ষার ফল মিলবে ওয়েবসাইটে, সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ

Bg-web20200622093712

চট্টগ্রামে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে নমুনা জট। শরীরে করোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। ফলে দিন দিন বাড়ছে ভোগান্তি। দ্রুত ফলাফল পেতে ওয়েবসাইট চালু করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। কিন্তু পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানো না গেলে এই সুবিধার সুফল মিলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘ইয়ং সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম বোর্ড’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কারিগরি সহায়তায় এবং সিভিল সার্জন অফিসের উদ্যোগে এই ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ল্যাবে প্রতিদিন পরীক্ষা করা নমুনার ফলাফল সংরক্ষিত থাকবে। ফলাফল প্রকাশের পর প্রত্যাশীরা সাইটে ভিজিট করে মোবাইল নাম্বারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে জানতে পারবেন তথ্য।

তবে দিন দিন নমুনা জট বৃদ্ধি পাওয়ায় সঠিক সময়ে ফলাফল পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। জানা গেছে,  প্রতিদিন ছয়শ থেকে সাতশ নমুনা পরীক্ষা করার পরও চারটি ল্যাবে প্রায় চারশ থেকে পাঁচশ নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকে। ফলে একটি ফলাফল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ দিন।

এ অবস্থায় ফলাফল প্রকাশের মতো নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে জোর দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সমাজকর্মীরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, পরীক্ষার ফলাফল পেতে ওয়েবসাইট চালু করা ইতিবাচক। কিন্তু চট্টগ্রামের বাস্তবতায় নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। কারণ নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো না গেলে এ উদ্যোগের সুফল মিলবে না। তাছাড়া যেহেতু নমুনা পরীক্ষার আওতা বাড়ানো বেশ ব্যয়বহুল, তাই অন্তত র‌্যাপিড কিটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে সংক্রমণের পরিমাণ জানা সম্ভব হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, নমুনা পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে- উদ্যোগটি ভালো। তবে নমুনা দেওয়ার পর ফলাফল পেতে বেশ সময় লাগছে। পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত দেওয়া যায় কিনা তা নিশ্চিত করা জরুরি। যত দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করা যাবে তত তাড়াতাড়ি রোগীদের আইসোলেটেড করা যাবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গভর্নর আমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, চট্টগ্রামে করোনার নমুনা সংগ্রহের পর ফলাফল পেতে ১৫ থেকে ১৬ দিন সময় লাগছে। ততদিনে একজন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারে, আবার একজন রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যেতে পারে। ফলে দুইদিকেই সংকট বাড়ছে। রোগী সুস্থ হয়ে গেলে তার কাছে রিপোর্টের মূল্য থাকে না। অন্যদিকে ফলাফল পাওয়া না গেলে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সময় এসে দ্রুত নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা না করে ফলাফল প্রকাশের জন্য ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হাস্যকর।

তিনি আরও বলেন, দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি জরুরি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করা। আগে নমুনা পরীক্ষা নিশ্চিত না করে ফলাফল প্রকাশে উদ্যোগী হওয়ার দরকার নেই। তাই চট্টগ্রামকে এই মহামারী থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই নমুনা পরীক্ষার আওতা বাড়ানো জরুরি।

রোববার (২১ জুন) বিকেলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এ ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। www.yasb.info নামে ওয়েবসাইটে আপাতত গত ১৬ জুন থেকে প্রকাশিত ফলাফলসমূহ পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ফলাফল পেতে দুর্ভোগ কমাতে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়েবসাইট চালু করার ফলে সহজে ফলাফল জানতে পারবে জনসাধারণ। গত ১৬ জুন থেকে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফল ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

নমুনা পরীক্ষার আওতা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। আমরা সেটিকে পুরোদমে চালু করার চেষ্টা করছি। এছাড়া মা ও শিশু হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি মিলেছে। বেসরকারি এপিক হেলথ কেয়ারও নমুনা পরীক্ষার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে। নমুনা জট কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

Pin It