তৃতীয় দফায় বন্যা চলছে দেশে। আর বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
নানা উদ্যোগের মধ্যে চলমান বন্যা শেষে এবার সময় মতো কার্যকর পুনর্বাসন কর্মসূচি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (২০ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠকে বন্যা নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেশের বিস্তৃর্ণ এলাকায় তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বন্যায় ৩১ জেলার প্রায় ৪০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বন্যা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন বন্য যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সম্ভাবনা আছে, সেক্ষেত্রে আমরা কীভাবে এটাকে মোকাবিলা করব। এ জন্য ফিল্ড লেভেলে ইন বিল্ড (মাঠ পর্যায়ে তৈরিই আছে) একটা মেকানিজম আছে তারপরও একটা এক্সটা এফোর্ড দেওয়া হচ্ছে, বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া আছে। কারণ হলো—একটা উদ্বেগ আছে পানি নামতে দেরি হতে পারে। যদিও এখন পানি নেমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পুনর্বাসন প্রোগ্রামগুলো যেন খুব ভালো হয়, খুব এফেকটিভলি হয়, টাইমলি হয়- সেটার বিষয় মন্ত্রিসভা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জোর দিতে বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেডিকশন আছে যে, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের যে দৃশ্যপট আছে তাতে বঙ্গোপসাগরসহ কতগুলো সাগরের কথা বলেছে, সেখানে পানির উচ্চতা এই সময়টাতে বেড়ে যাচ্ছে। সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে পানি নামার ফ্লো কমে যাবে। ভাদ্র মাসের প্রথম থেকে হয়তো একটু লংগার পিরিওড পানি স্ট্যাগার হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রিপারেশন রাখতে হবে।
সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিয়েছেন- যত রকমের সাহায্য-সহযোগিতা মানুষের দরকার সবগুলো করতে হবে। কোভিডের এই সময় যেহেতু বন্যা, তাই একটু বেশি কেয়ারফুল থাকতে হবে। অলরেডি প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ে যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করেন তারা অবশ্যই সেখানে থাকবেন।
বন্যায় আমনে ক্ষতি হলেও পলির কারণে বন্যার পরের সুফলটা নিতে কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, উঁচু এলাকায় আমনের ফলন ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী এটা ডিটেইলস এক্সপ্লেইন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন, রোপা আমনে যেন আমরা খুব অ্যাটেনটিভ থাকি। এর পুরো সুযোগটা যদি আমরা নিতে পারি তবে বোরোতে যে এক্সেস প্রোডাকশন হয়ে গেছে, আশা করা যাচ্ছে আমন ও রোপা আমন মিলে আমাদের উৎপাদন ভালো হলে আমাদের জন্য একটা বড় হাতিয়ার হবে। খাদ্যদ্রব্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ আছি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেখানে যেখানে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র পর্যাপ্ত নয় সেখানে আমি নিজে নির্দেশনা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেও দিয়েছেন ওই এলাকাতে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় লোকজন আশ্রয় নিতে পারে।
আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বিশেষ করে করে গরু বাছুরকে যে ভ্যাকসিন দেয়ার সেগুলো যেন সব রেগুলার দেয়া হয়। এগুলো অলরেডি সুপারভিশন করা হচ্ছে, ইন্সট্রাকশন দেয়া হচ্ছে।
করোনার কারণে ত্রাণ সরবরাহের জন্য সরকারের প্রস্তুতি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সবকিছু ওপেন করে দেয়ায় ত্রাণের চাহিদা কমে গেছে। ভালো একটা রিলিফ আমাদের কাছে মজুত আছে।