দুর্নীতিবাজদের প্রতি সিসিসি প্রশাসকের হুঁশিয়ারি

sujan-at-ccc-060820-01

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে খোরশেদ আলম সুজন হুঁশিয়ার করেছেন, দুর্নীতিবাজদের কোনোরকম ছাড় দেয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় নগরীর টাইগার পাসে অস্থায়ী নগর ভবনে প্রশাসকের দায়িত্ব বুঝে নেন সুজন।

এর আগে ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে চিরচেনা পাঞ্জাবি ও সবুজ টুপি পরিহিত সুজন নগর ভবনে আসেন। কিছুক্ষণ পরেই হাজির হন সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

দায়িত্ব গ্রহণ করে সম্মেলন কক্ষে সিসিসির কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন সুজন।

এসময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “মেয়র দায়িত্ব শেষ করে চলে যাবেন, কিন্তু আপনারা এখানে থাকবেন। তাই আমার অনুরোধ, আপনাদের উপর অর্পিত যে দায়িত্ব তা শতভাগ সততার সাথে পালন করবেন।

“প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগকৃত প্রশাসক হিসেবে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। এই সিটি করপোরেশনকে আমি দলীয় কার্যালয় করব না। এখান থেকে নগরবাসীর সেবায় যা প্রয়োজন সেটাই করব।”

তিনি বলেন, “মেয়র থাকাকালে ১৭ বছর মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে উনার পেছনে পেছনে ছিলাম। এই শহরের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। অর্পিত দায়িত্ব আমার শ্রেষ্ঠটা দিয়ে পালন করব।

“অতীতে কি ছিল সেটা.. উনি (নাছির) কিন্তু অনেক উদার লোক, আমি উদার না। এমনে হাসিখুশি…। দুর্নীতি যারা করেছেন আজকে তওবা করে ফেলেন। যার কাছে অনিয়ম দেখব, দুই নম্বরি দেখব, আমার সাথে বেঈমানী করবেন, তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেব না। সেটা আইনি পথে বা বেআইনি পথে হোক… যারা বিশ্বাসঘাতক, সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয় তাদেরকে ক্ষমা করব না।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খোরশেদ আলম সুজন। বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এসময় তার পাশে ছিলেন।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খোরশেদ আলম সুজন। বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এসময় তার পাশে ছিলেন।সুজন বলেন, “না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দেব কিন্তু অন্যায়ের সাথে আপস করব না। ভুল করে ভুল স্বীকার না করা সবচেয়ে বড় অপরাধ। ভুলের হিমালয় তৈরি করা, এটা করতে দেব না। অনেক দিন ধরে কাজ করছেন, আপনাদের যোগ্যতা দক্ষতা প্রশ্নাতীত। এটাকে ভালো কাজে ব্যবহার করুন। সকাল ৯টা ১৫মিনিটে দেখলাম জিপিওর সামনে অনেক ময়লা জমে আছে। এটা দেখতে চাই না।”
পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উদ্দেশে সুজন বলেন, “যেদিন বৃষ্টি হবে আমিও আপনাদের সাথে থাকব। কোথায় পানি জমে, কেন জমে, আমি দেখব। ঘরের মধ্যে থেকে, ওয়াকিটকিতে- ‘হ্যালো আমি কামাল স্টোরের নিচে আছি, পানি পরিষ্কার করছি’ সেটা হবে না। আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মী। রাতের একটা দুইটা পর্যন্ত কাজ করেছি।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে সুজন বলেন, “কোথায় সমস্যা আছে আমাকে জানান। সমালোচনাকে ভয় পাই না। আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করি। আমাকে ১৮০ দিন সময় দিয়েছে, ইনশাল্লাহ ১৮০ দিন আমি রাস্তায় থাকব। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ আমার হাতে নেই যে রাতারাতি সব সমস্যা শেষ করতে পারব। কাজ করতে গিয়ে ভুল হতে পারে কিন্তু ডিজঅনেস্টি থাকবে না। ভুল ধরিয়ে দিলে সংশোধন করার মত মন আমার আছে।”

তিনি বলেন, “আমি ১৮০ দিনের প্রশাসক, প্রতিটা মুহূর্ত সবাইকে নিয়ে কাজ করব। সপ্তাহ দশদিন গেলে বুঝবেন, ১৮০ দিনে কী করতে পারি। আমাকে এখানে যিনি পাঠিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি নিজেই এই শহরের দায়িত্ব নিয়েছেন। ১৮০ দিনে আমি বড় কোনো প্রজেক্ট নিব না। যেগুলো চলমান সেগুলো যেন সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন হয়। আগে পুকুরে নামতে দেন তারপর দেখবেন কিভাবে সাঁতার কাটি।”

জলাবদ্ধতা নয় জলজট

চট্টগ্রামকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর একটি উল্লেখ করে সিসিসি প্রশাসক বলেন, “সাগর ও নদীর মোহনার একটি প্রাকৃতিক শহর। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, বলেছে জলাবদ্ধতা এই শহরের প্রধান সমস্যা। আমি তো বলি যে, এই শহরে কোথাও জলাবদ্ধতা দেখি না।

“জলাবদ্ধতা মানে যেখানে জল দিনের পর দিন মাসের পর মাস আটকে থাকে। যেমন ঢাকা যাত্রাবাড়িতে, খুলনায় একটা জায়গায় যা দেখি, সেটা জলাবদ্ধতা। এখানে যা হয় সেটা জলজট। জলজটটা কেন হয়? অমাব্যসা-পূর্ণিমায় যখন জোয়ারটা প্রবল হয় তখন সাথে যদি বৃষ্টিসহ হয় এটা নিষ্কাশনের জন্য যে ব্যবস্থাপনা অনেকটা অপ্রতুল, এটার কারণে কিছুক্ষণ জমে থাকে। কিন্তু যখন ভাটা হয় পানিটা নেমে যায়।”

তিনি বলেন, “এই জলজট নিরসনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বড় প্রকল্প নিয়ে সেনাবাহিনী সদস্যদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। উনারা দিনরাত পরিশ্রম করে কাজ করছেন।

“শত বছরের সংকট এক বছরে শেষ হবে না। প্রতিদিন খোঁজ রাখব, আশা করি আগামী বছর থেকে একটা সুখবর পাবেন। নগরবাসীকেও বলব, ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া, এদিকের পানি ওদিকে যেতে দেন না, জায়গায় জায়গায় পানির ফ্লো বন্ধ করে দিয়েছেন, এটা করবেন না।”

এসময় নিজের সাদা দাড়ি ও নাছিরের কালো চুল-গোঁফ দেখিয়ে নাছিরকে ‘চির তরুণ’ বলেও রসিকতা করেন সুজন।

মেয়র পদে পাঁচ বছর নাছির ‘অক্লান্ত’ পরিশ্রম করেছেন উল্লেখ করে সুজন বলেন, “এতদিন অন্যভাবে কাজ করছিলাম, নাগরিক উদ্যোগ নিয়ে বারবার এসেছি। মেয়র আমাকে সহযোগিতা করেছেন।

“আমরা একসাথে শিক্ষাজীবন কাটিয়েছি, রাজনীতি করেছি। এ শহর আমাদের শহর, সকলে মিলে মিশে শৈশব, কৈশোর, যৌবন, জীবন এ শহরে কাটাব। যার যেটা দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করবেন। এই শহর মাল্টি কানেকটিভিটিতে দাঁড়িয়ে আছে। পাঁচ বছরের মধ্যে সিঙ্গাপুরের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সিসিসির নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে না হওয়ায় গত মঙ্গলবার প্রশাসক পদে খোরশেদ আলম সুজনকে দায়িত্ব দেয় সরকার।

Pin It