ভারত, পাকিস্তান, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশের তথ্যের মান খুবই দুর্বল বলে জানিয়েছে দেশটির অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের শুমারি, খানা আয়-ব্যয় জরিপ (এইচআইইএস) ও পরিসংখ্যানগত সব তথ্য প্রকাশ করে।
এসব কাজে তথ্যের উৎস ও পদ্ধতিগত বিষয়গুলো ভালোমতো অনুসরণ করা হলেও ঠিক সময়ে তথ্য প্রকাশে দুর্বলতা রয়েছে।
গেল অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসাব তুলে ধরে পরিসংখ্যান ব্যুরো। যার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। অনেক সময় রাজস্ব, রপ্তানি আয়, এডিপিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুটি সংস্থার মধ্যে সরকারি তথ্য নিয়ে ভিন্নরকম উপস্থাপনাও দেখা যায়। সরকারি সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যানগত দুর্বলতার চিত্র উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের স্ট্যাটিসটিক্যাল ক্যাপাসিটি স্কোরে। এ সময়ে দেশের পয়েন্ট কমেছে ১৮।
বিশ্বব্যাংক বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে পরিসংখ্যানগত দুর্বলতা আরো তীব্র হয়েছে। দেশের তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল ২০১৪ সালে। সে বছরে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে প্রায় ৮০ পয়েন্ট পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্কোর পয়েন্ট কমে ৬২ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তথ্যসূত্র ও উৎস, মেথডোলজি এবং সময়কাল এ তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এই মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে ২৫টি মানদণ্ডের বিপরীতে গড় স্কোর নির্ধারণ করে সংস্থাটি। সূচকটি তৈরিতে দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রের তথ্যের সরবরাহ ও পদ্ধতিগত এবং সময় বিষয়গুলোর ওপর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান সূচক, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট বা জিডিপির হিসাব, লেবার ফোর্স সার্ভে, বাণিজ্য (আমদানি-রফতানি) এইচআইইএস, দরিদ্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজস্ব ও মুদ্রানীতিবিষয়ক তথ্য, বাজেট, ব্যালান্স অব পেমেন্ট, সব বিভাগের আর্থসামাজিক তথ্য। বিশ্বব্যাংকের বিবেচনায় মূলত তথ্যের উৎস দুর্বলতা, মেথডোলজিক্যাল দুর্বলতা বা মান নির্ধারণে দুর্বলতা, নির্ভুলতা ও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করতে না পারার কারণেই ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের তথ্যের মান দুর্বল হচ্ছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্ট্যাটিসটিক্যাল ক্যাপাসিটি স্কোরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের ঠিক ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ভারতের পয়েন্ট ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া ভুটান ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ, শ্রীলংকা ৮১ দশমিক ১ শতাংশ, পাকিস্তান ৭১ দশমিক ১ শতাংশ, নেপাল ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ ও আফগানিস্তান ৫০ পয়েন্ট পেয়েছে। সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গড় ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ পয়েন্ট হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্ট ও মুদ্রানীতির মেথডোলজি ও সোর্স আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত হয়েছে। তবে এ দুই খাতের তথ্য প্রকাশে সময়ক্ষেপণ রয়েছে। আবার রপ্তানি ও রাজস্ব খাতের তথ্য পিরিওডিক্যালি প্রকাশের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। রপ্তানি তথ্য প্রকাশে আন্তঃসংস্থার সমন্বয়ে এখন অগ্রগতি ভালো হয়েছে। কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে রাজস্ব খাত।
তবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পর সময়মতো এসব খাতের তথ্য প্রকাশে গতি এসেছে। গত কয়েক মাসে নিয়মিতভাবে রাজস্ব আয়, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ ও বাংলাদেশের ব্যাংকের বেশকিছু সূচকের তথ্য প্রকাশ করছেন তিনি। আন্তঃপ্রতিষ্ঠান সমন্বয় আনতে প্রতি তিন মাস পরপর অর্থ মন্ত্রণালয়গুলোর অধীন সংস্থাগুলো নিয়ে বৈঠক করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এক জিডিপির তথ্য দিয়েই মনে হয় বিবিএস সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। এরপরই রয়েছে মানুষের আয়ুষ্কালের এত দ্রুত বৃদ্ধি। সক্ষমতা বা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আর্থিক বা জনবলের কোনো সংকট আছে বলে আমার মনে হয় না। সংকট শুধু স্বায়ত্তশাসনে। এ প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে অটোনমি হারিয়ে ফেলেছে। ফলে ২০১৫ সাল থেকে জ্যামিতিক হারে অবস্থান তলানিতে গিয়েছে।