সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স- বিএসএফ) মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা। একইসঙ্গে সীমান্ত হত্যার মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকেই দোষারোপ করছেন তিনি।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদরদপ্তরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সীমান্ত হত্যাকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে বিএসএফ প্রধান বলেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ বিষয়ে বিজিবির সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে ‘নন লিথেল’ (প্রাণঘাতী নয় এমন) অস্ত্র ব্যবহারে আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। একেবারে প্রাণ সংশয়ে না পড়লে লিথেল অস্ত্র ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে।
‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাদক-পশু-অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবসত এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি নজরদারি করতে আমাদের দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যেই গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ’
সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রায় ৭০ ভাগ মৃত্যুই রাতের বেলা অর্থাৎ রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে ঘটে থাকে। এ সময়টাতে সাধারণত নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমই ঘটে থাকে। এ সময়টাতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসীরা বিএসএফ সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করে বসে। এছাড়া রাতের বেলা আবহাওয়া অনুকূলে থাকে না, সবকিছু দৃশ্যমানও থাকে না।
‘এমন ৬০ ভাগের বেশি ঘটনায় বিএসএফ সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ৫২ জন বিএসএফ সদস্য বিভিন্ন আক্রমণে আহত হয়েছেন। শুধু আক্রান্ত হলেই বিএসএফ লিথেল অস্ত্র ব্যবহার করে। ’
সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ডের জন্যই সীমান্ত হত্যা বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। আমরা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ সমন্বয়ে জয়েন্ট পেট্রোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এটা বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে এটা আমরা আবারও ব্যাপকভাবে শুরু করতে চাই। আমরা সীমান্তে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কমিটেড।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে সকালে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বিএসএফএর গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, এ বিষয়ে বিএসএফ প্রধান বলেন, দিনে কিংবা রাতে যখনই এমন ঘটনা ঘটে, প্রত্যেকটি ঘটনাতেই আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়। প্রত্যেকটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হয়। এ বিষয়টিও তদন্ত করে ভবিষ্যতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ ঘটনাই রাতে ঘটে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য কেউ বর্ডার ক্রস করে ভারতে প্রবেশ করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আমরা আবারও সীমান্তে যৌথ টহল শুরু করব।
মাদক চোরাচালানের বিষয়ে বিজিবি প্রধান বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা উভয়পক্ষ কনসার্ন। উভয়েই তথ্য আদান-প্রদান করে মাদক চোরালান প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি।
বিএসএফ প্রধান বলেন, ভারতীয় সীমান্ত ব্যবহার করে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মাদকের চালান প্রতিরোধে বিএসএফসহ ভারতীয় অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও সচেষ্ট রয়েছে। আমাদের সম্মিলতি তৎপরতায় সীমান্তে বিপুল পরিমাণ মাদক ধরা পড়ছে। মাদকের চালান শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতেও আমরা কমিটেড।
বিজিবি সদরদপ্তরে (১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর) বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে ৫০তম সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সম্মেলনের যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়।