জাতিসংঘে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত

image-203707-1607001437

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে রেজুলেশনটি সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এসময় প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কোভিড-১৯ অতিমারি সৃষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহ কাটিয়ে উঠতে শান্তির সংস্কৃতির মহান বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথমবারের সরকারের সময় ১৯৯৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রেজুলেশনটি প্রথমবারের মতো গৃহীত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশনটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন এবং ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি ফোরামের আয়োজন করে আসছে। এ বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভার্চ্যুয়ালি ‘শান্তির সংস্কৃতি: কোভিড-১৯ এর সময়ে পৃথিবীকে আবার ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের ফোরামটি অনুষ্ঠিত হয়। কোভিড-১৯ সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রেও যে শান্তির সংস্কৃতির প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে উচ্চ পর্যায়ের ওই ফোরাম তারই স্বীকৃতি।

সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশনটি গ্রহণ শান্তির সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর বিশ্বাস ও আস্থার বহিঃপ্রকাশ। রেজুলেশনটিকে উদারভাবে সমর্থন করার জন্য রাষ্ট্রদূত ফাতিমা সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, রেজুলেশনটির সার্বজনীনতার কারণেই আজ জাতিসংঘের প্রধান প্রধান কার্যাবলীতে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ একটি প্রভাব সৃষ্টিকারী ধারণায় পরিণত হতে পেরেছে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এটি একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত যা বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে জাতিসংঘ সনদের দায়বদ্ধতার পরিপূরক হিসেবেও ভূমিকা রেখে চলেছে।

শান্তির সংস্কৃতিকে বাংলাদেশের জনকেন্দ্রিক জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

শিক্ষা, টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার সুরক্ষা, পুরুষ ও নারীর সমতা, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, সহনশীলতা ও সংহতি বজায় রাখা, তথ্য ও জ্ঞানের অবাধ প্রবাহ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা-এই আটটি ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক নীতি কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ ধারণাটি পুরোপুরি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

আরও পড়ুন: বিদ্রোহীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না: ওবায়দুল কাদের

শান্তির সংস্কৃতি উন্নয়নে অপরিহার্য বিষয়সমূহ যেমন শান্তি, সহিষ্ণুতা, উদারতা, অন্তর্ভুক্তি ও পারষ্পরিক সম্মান ইত্যাদি যাতে তরুণ সমাজ ধারণ করতে পারে সেজন্য শান্তির শিক্ষা ও বৈশ্বিক নাগরিক হওয়ার শিক্ষার মাধ্যমে শান্তির সংস্কৃতি ও অহিংসার ধারণাটি এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ গৃহীত আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি, সহিংস উগ্রবাদ দমন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করাসহ বিভিন্ন জাতীয় কর্মসূচির উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, আমরা যেহেতু কোভিড-১৯ অতিমারির বিরুদ্ধে এবং পৃথিবীকে পূর্বের ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, তাই আসুন, আমরা আমাদের জনগণের জন্য, বিশ্বের জন্য এবং উন্নত পৃথিবী বিনির্মাণের বাধা অপসারণের জন্য শান্তির সংস্কৃতি সম্পর্কিত ঘোষণা ও কর্মসূচির প্রতি পুনঃপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই।

এবছর ১১০টি জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্র বাংলাদেশের এই রেজুলেশনটিকে কো-স্পন্সর করে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা এটি গ্রহণের সময় বক্তব্য দেন।

Pin It