আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে ‘আশ্বস্ত’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ‘ভালো’ হবে।
আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। তার তিন দিন আগে রোববার চট্টগ্রামে গিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
সভা শেষে নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, “বিজিবি, আনসার, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার ১৬ জনের বক্তব্য আমরা শুনেছি। নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে তারা সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেকে আশাবাদী ২৭ জানুয়ারির চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্টু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে।
“আমরা আশ্বস্ত হয়েছি, বিভিন্ন পর্যায়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যে নিয়োগ-মোতায়েন সেটা সঠিকভাবে হয়েছে। আশা করি, নির্বাচন ভালো হবে।”
নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে বিএনপি। দলটি বলছে, ইসি সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ হয়ে কাজ করছে।
চলমান পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা ঘটনা আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ে নতুন সমালোচনায় পড়েছে ইসি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার পোস্টারে ছেয়ে গেছে চট্টগ্রামের লালখান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা। ছবি: সুমন বাবুচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার পোস্টারে ছেয়ে গেছে চট্টগ্রামের লালখান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা।
তার মধ্যেই অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রচারে সংঘাতে প্রাণক্ষয়ের পর ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী।
তা নাকচ করে নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই, তার প্রয়োজনীয়তাও কমিশন অনুভব করছে না।
তিনি বলেন, “যেখানে ইভিএমে ভোট হবে সেখানে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা থাকবে। ভেতরে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়া, সেটা সম্ভব না।”
বিএনপির প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট এবং সমর্থকদের বাসায় গিয়ে পুলিশ হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন।
এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিইসি বলেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিষ্প্রয়োজনে হয়রানি করছে, এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই।
“যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে এবং আদালতের ওয়ারেন্ট আছে, অবশ্যই পুলিশ তো তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা করতে পারে। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাদের অভিযান নেই।”
তিনি জানান, শনিবার পর্যন্ত জমা পড়া ৫৬টি অভিযোগের মধ্যে ৩৫টি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বাকিগুলো তদন্তনাধীন।
বিভিন্ন মামলার অনেক আসামি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিইসি বলেন যে এক্ষেত্রে আইনের কারণেই তাদের কিছু করার নেই।
“কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না সেটার একটা আইন আছে। কারা প্রার্থী হতে পারে সেটার কতগুলো বিধান আছে। যদি কেউ দুই বছরের শাস্তি পান তাহলে তাহলে তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হয়। যদি কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে সে অপরাধী না।”
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ ভোট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ছবি: সুমন বাবুসিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ ভোট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ছবি: সুমন বাবু
ভোটের তারিখ সপ্তাহের মাঝামাঝি রাখার কারণ দেখিয়ে নূরুল হুদা বলেন, “নির্বাচন বৃহস্পতিবার বা রোববার করলে সেখানে আমাদের আশা থাকে ভোটাররা ভোট দেবে। কিন্তু দেখা যায় ছুটি পেয়ে তারা সবাই বাড়ি চলে যায়। ভোট দেয় না। সেকারণে আমরা মাঝখানে রাখি।”
সাধারণ ছুটি না রাখার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “কেবিনেট থেকে একটা নির্দেশনা জারি আছে। যারা ব্যক্তিগত বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন, তাদের যেন ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এ কারণে সাধারণ ছুটি রাখি না।”
ভোটের দিন বন্দর নগরীতে ট্রাক এবং মোটর সাইকেল চলাচল নিষেধ থাকবে জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় বহিরাগত লোকজন এসে তা ব্যবহার করে। তবে বড় বড় ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম চালু থাকবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার রশিদুল হাসানসহ র্যাব, আনসার, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।