জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ ৪ হাজার ৩৪৭ দশমিক ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে । এছাড়াও একনেকের বৈঠকে আরো ৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। আটটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার ১৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬ হাজার ১৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
বুধবার রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগদান করে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ একনেকের বাকি সদস্যরা এনইসি সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন ছিলেন।
এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা সচিব জয়নুল বারি, বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পা কমিশনের কৃষি পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর একটি বড় প্রকল্প। এখানে আমরা অবকাঠামো তৈরি করে দেব। বিনিয়োগকারীরা বাকি কাজ করবে। শিল্প নগরে আমর্স বা ড্রাগ তৈরির জন্য প্রকল্প নেয়া যাবে না। এখানে আমাদের অনুমোদিত পণ্য তৈরির জন্য যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পল্লী সড়কে গুরত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা এনভায়রনমেন্টালী সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট, টাঙ্গাইল জেলার ১০টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ প্রকল্প, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প, ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন-ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প, হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প।
ঢাকা এনভায়রনমেন্টালী সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট-এর আওতায় পরিবেশগত ও জলবায়ু প্রভাবের কারণে বাধাগ্রস্থ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে রাজধানীর পানি সরবরাহ আরও উন্নত করতে মেঘনা নদী থেকে পানি আনা হবে।
যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষিত ড্রাইভার তৈরি করা হবে। এক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে, যারা নিরক্ষরদের নেয়া হবে না। যারা অষ্টম শ্রেণী পাশ, সুস্বাস্থ্যেও অধিকারি এবং চোখ ও কান যাদের ঠিক থাকবে তারা প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন বলে মন্ত্রী জানান।
বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৩ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভুত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ২১ শতাংশ।
এম এ মান্নান বলেন, এ মাসে চালের দাম নিয়ে লাফালাফি হলেও এর প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে পড়েনি। আগামী মাসে আশা করি মূল্যস্ফীতি আরও কমবে।
গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। খাদ্য-পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭২ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
মন্ত্রী জানান, প্রকল্প তৈরিতে যাদের কারণে পরবর্তীতে নতুন আইটেম যোগ করতে হয় এবং এর ফলে, প্রকল্প-ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রকল্প তৈরিতে যাদের কারণে ভুল হয়, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুঁজে বের করুন, কারা জড়িত ছিলেন। সেই সঙ্গে জানাতে হবে এদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বড় বড় সেতু নির্মাণে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে। জনগণের প্রয়োজনে তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন সেতু নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ না হয়। সেতুগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্থ না হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু বড় ঠিকাদাররাই নয়, ছোট ঠিকাদাররাও যাতে কাজ পান সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।