শ্রীলঙ্কার মত অবস্থা হতে পারে আরও এক ডজন দেশের

default-160722-05

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট একটি দেশকে কতটা চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায় তার জ্বলন্ত উদারহণ শ্রীলঙ্কা। দেশটির এ অবস্থা বিশ্বজুড়ে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকার এবং নাগরিকদের চরম দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। চোখ রাঙাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্ব বাজারে বিশৃঙ্খলা।

ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কা, লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম এবং জিম্বাবুয়ে ঋণ খেলাপি দেশে পরিণত হয়েছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বেলারুশসহ আরো অন্তত এক ডজন দেশ খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে।

এসব দেশের মাথার উপর অকল্পনীয় ঋণের বোঝা চেপে আছে। বিশেষজ্ঞরা হিসাব করে বলেছেন, সংখ্যার হিসাবে এই ঋণের বোঝার পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ঋণের বোঝা আর্জেন্টিনার মাথার উপর। দেশটিকে ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

তারপর আছে ইকুয়াডর এবং মিশর। দেশদুটিকে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা এখনো আশা ছাড়েননি। তারা বলছেন, যদি বিশ্ববাজার শান্ত হয়ে আসে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বেশ কিছু সমর্থন পাওয়া যায় তবে হয়তো কিছু দেশ খেলাপি হওয়া এড়িয়ে যেতে পারবে।

সেসব দেশ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে:

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার মুদ্রা পেসো কালোবাজারে এখন প্রায় ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে লেনদেন হচ্ছে। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বিপজ্জনক মাত্রায় কমে গেছে। ২০২০ সালে দেশটি তাদের ঋণ পুনর্গঠন করেছিল। ওই সময় তাদের বন্ড বাণিজ্যের যে হার ধরা হয়েছিল এখন তারও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

২০২৪ সাল পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত যথেষ্ট ঋণ আর্জেন্টিনা সরকারের কাছে নেই।

ইউক্রেইন

রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেইনকে অবশ্যই তাদের প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে দেশটিকে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। যদি তারা সেটা পরিশোধ করতে না পারে তখনই সংকট দেখা দেবে।

সহায়তার অর্থ এবং রিজার্ভ থেকে সম্ভবত কিইভ তা পরিশোধ করতে পারবে। যদিও দেশটির রাষ্ট্র পরিচালিত জ্বালানি কোম্পানি ‘নাফতোগেজ’ এ সপ্তাহে দুই বছরের জন্য দেশটিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা বন্ধ রাখতে বলেছে। বিনিয়োগকারীদের ধারণা দেশটির সরকার এই পরামর্শ অনুসরণ করবে।

তিউনিসিয়া

ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আফ্রিকা থেকে বেশ কয়েটি দেশ আইএমএফ-র সঙ্গে দেনদরবার করছে। তিউনিসিয়া সেগুলোর মধ্যে সবথেকে ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রায় ১০ শতাংশ ঘাটতি বাজেট এবং সরকারি কর্মীদের মজুরি হিসেবে বিশ্বে সবেচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর একটি তিউনিসিয়া। দেশটির জন্য আইএমএফ প্রকল্প সুরক্ষিত রাখা বা অন্তত সেগুলো অনুসরণ করা কঠিন হবে। কারণ দেশটির প্রেসিডেন্ট কাইস সাঈদ দেশটির শাসন ব্যবস্থার উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আরো শক্তিশালী করতে চাইছেন।

এদিকে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারুয়ান আব্বাসি বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে একটি চুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।”

ঘানা

এ বছর ঘানার ‍মুদ্রা সেডির মূল্য প্রায় একচতুর্থাংশ কমে গেছে। দেশটি এরইমধ্যে কর থেকে প্রাপ্ত তাদের রাজস্বের অর্ধেকের বেশি ঋণের সুদ প্রদাণে ব্যয় করছে। সেখানে মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

মিশর

মিশরে ঋণ ও জিডিপির অনুপাত প্রায় ৯৫ শতাংশের কাছাকাছি। ফান্ড ফার্ম ‘এফআইএম ‍পার্টনারস’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরের ব্যয় মেটাতে মিশরের ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার নগদ অর্থের প্রয়োজন পড়বে।

মিশর তাদের মুদ্রা পাউন্ডের ১৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন করেছে এবং গত মার্চে আইএমএফ-র কাছে সহায়তা চেয়েছে।

কেনিয়া

কেনিয়া তাদের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ ঋণের সুদ প্রদাণে ব্যয় করে। তাদের বন্ডের মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং বর্তমানে কোনো পুঁজি বাজারে তাদের প্রবেশাধিকার নেই।

ইথিওপিয়া

জি২০’র ‘কমন ফ্রেমওয়ার্ক প্রকল্পের’ আওতায় ঋণ ত্রাণ পাওয়া প্রথম দেশগুলোর একটি হওয়ার চেষ্টা করছে ইথিওপিয়া। চলমান গৃহযুদ্ধের কারণ দেশটির অগ্রগতি থমকে গেছে। যদিও এর মধ্যেও দেশটির তাদের একমাত্র ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বন্ড পরিষেবা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

পাকিস্তান

পাকিস্তান এ সপ্তাহে আইএমএফ-র সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছে। দেশটির অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে ওই চুক্তিটি করতে পারা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি দরকারি ছিল। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের অত্যধিক দাম বৃদ্ধি দেশটির আমদানি ব্যয় ভারসাম্য পুরোপরি নষ্ট করে দিয়েছে।

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯৮০ কোটি মার্কিন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। যা দিয়ে দেশটির বড়জোর তাদের পাঁচ সপ্তাহের ব্যয় মেটাতে পারবে।

গত সপ্তাহের শেষে পাকিস্তানের মুদ্রার রুপির রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। দেশটির নতুন সরকারকে দ্রুত ব্যয় কমাতে হবে। কারণ এখন তাদের রাজস্ব আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণের সুদ প্রদাণে ব্যয় করতে হবে।

বেলারুশ

পশ্চিমা কঠোর নিষেধাজ্ঞা গত মাসে রাশিয়াকে ঋণ খেলাপি করে ছেড়েছে। ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এখন বেলারুশকেও একই কঠোর আচরণ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

ইকুয়াডর

লাতিন আমেরিকার এই দেশটি মাত্র দুই বছর আগে একবার খেলাপি হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট গিয়েরমো লাসোকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ আবারও ইকুয়াডরকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে।

এছাড়া নাইজেরিয়া এবং এল ‍সালভাদোরও একই কাতারে রয়েছে।

Pin It