নয়া পল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর দলটির কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখান থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি›র আহবায়ক আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েলসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে।
তবে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে বিএনপির দাবি দুই শতধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক হওয়ার আগে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ কমিশনার আমাকে ডেকেছেন তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। নয়াপল্টন থেকে আমি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। পরে তাকে আটকের খবর পাওয়া যায়।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। দুপুরে নেতাকর্মীদের ভিড় শুরু হয়। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ সময় সংঘর্ষে মকবুল হোসেন (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২১ জনকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে।
হঠাৎ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পুলিশ এখনো বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে রেইড করছে। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। কার্যালয়ের ভেতরে নজিরবিহীন ভাঙচুর-সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের শত শত লোককে গ্রেপ্তার করেছে। রিজভী, মহানগরের আহ্বায়ক আব্দুস সালামকে দেখলাম তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আরো অনেক নেতাকর্মীকে তুলে নিয়েছে। মহিলাদের অনেককে নিয়ে গেছে। একজন শুনেছি মারা গেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। পুলিশ নিজেরা ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকেছে, এখন ওটাই তারা বিস্ফোরক হিসেবে চালাবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, তারা দলীয় কার্যালয়ে চাল, ডাল, খাবার-দাবার জমা করেছে বলে শুনেছি। তারা চাল-ডালের বস্তার মধ্যে ককটেল নিয়ে রেখেছে। আমরা সেখানে নাশকতাবিরোধী অভিযান চালিয়েছি।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বোমা রাখার খবর একদম বাজে কথা। আমি কমিশনারের সঙ্গে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন যে কিছু হবে না, আপনাদের কোনো সমস্যা নেই। তারপরও তারা এই ভয়াবহ নির্যাতন চালালো। এই নির্যাতন চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবেন না। একটা সভ্য দেশে এটা বিশ্বাস করা যায় না। এখানে পুলিশ যে কি ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে আপনারা ভাবতেও পারবেন না। তারা সব দরজা ভেঙেছে, সবকিছু ভেঙে দিয়েছে।
পুলিশ ব্যাগ নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকেছে এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃঢ়ভাবে তিনি বলেন, আমি নিজে দেখেছি তারা ব্যাগ নিয়ে ঢুকেছে। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিলো না। তারা ব্যাগ নিয়ে ঢুকেছে। আমাকে ঢুকতে না দিয়ে তারা এই বোমার নাটকটা সাজালো।এটা নজিরবিহীন পুলিশি সন্ত্রাস। ১০ তারিখ অনুষ্ঠেয় বিএনপির ঢাকা সমাবেশ বানচাল করার জন্য, সমাবেশটা পণ্ড করার জন্য পুলিশ এসব করেছে।
পুলিশ হঠাৎ বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করতে চাইবে? জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ বলেছিল যে আজ তারা জানাবে যে সমাবেশ কোথায় হবে বা কী করা হবে। কিন্তু পরে তারা এমন ঘটনা ঘটালো। তাদের এই আচরণ পুরোটাই পরিকল্পনা করে করা। আমাদের দাবি, এই মুহূর্তে আটক করা সবাইকে মুক্তি দিতে হবে, পুলিশ উইথড্র করতে হবে, যথাস্থানে সমাবেশ করতে দিতে হবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মির্জা ফখরুল বিএনপি কার্যালয়ের সামনে একা বসে ছিলেন এবং পুলিশ তাকে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে।
এদিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে অসংখ্য বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। সেফটি ও সিকিউরিটিকে যারা নষ্ট করতে চায়, তাদের কোনোভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ ছাড় দেবে না। তিনি বলেন, আমরা যখন দেখলাম, জনগণের জানমালের জন্য হুমকিস্বরূপ কার্যক্রম হচ্ছে নয়াপল্টন এলাকায় এবং পুলিশের ওপর হামলা ও বোমা নিক্ষেপ হয়েছে, তখন আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে নয়াপল্টন থেকে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেছি। অসংখ্য সন্ত্রাসী গ্রেফতার করেছি। এ ছাড়া অসংখ্য বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে গ্রেফতারের সংখ্যা বলা যাবে না, আমরা এখন অ্যাকশনে আছি। তবে গ্রেফতার অনেক। বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছেন কি না- জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, তারা এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।