উকিল সাত্তারের জন্য ভোটের মাঠ ছাড়লেন আ.লীগ

bnp-1-20230104195058

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির সাবেক নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঞার জন্য উপনির্বাচনে লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন।

শনিবার সকালে তারা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এই তিন প্রার্থী ছাড়া আজ এখন পর্যন্ত আর কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।

প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা তিনজন হলেন— জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন এবং স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবেই ভোটের মাঠ ছাড়লেন ক্ষমতাসীন দলের এই তিন নেতা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে (সরাইল-আশুগঞ্জ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া দলের তিন নেতাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকের (শনিবার) মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলা হয় দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলেছে, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে উকিল আবদুস সাত্তারকে জয়লাভ করাতে দলে অনানুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা গতকাল (শুক্রবার) এই তিনজনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থী থাকতে পারবেন না— এই বার্তা দেওয়া হয় তাদের। এই তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য শেষ দিন রোববার পর্যন্ত সময় চাইলে তাতেও সায় দেননি জেলার নেতারা। শনিবারের মধ্যে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েন ৫ জন। এখন পর্যন্ত বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ৮।

সারা দেশে বিএনপির ছয় সংসদ সদস্য পদত্যাগ করার পর শূন্য হওয়া আসনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি।

উকিল আবদুস সাত্তার ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচিত হন। তখন আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে (জাপা) আসনটি ছেড়ে দেয়। তখন জাতীয় পার্টি প্রার্থী করে তাদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামকে। এর আগের দুটি নির্বাচনে এই আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন রেজাউলের শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন না দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন দলটির নেতা মো. মঈন উদ্দিন। তিনি আবদুস সাত্তারের কাছে ৮ হাজার ভোটে হেরে যান। জিয়াউল হক মৃধা হন তৃতীয়। এবার উপনির্বাচনেও মঈন উদ্দিনের মতো জিয়াউল হক মৃধাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

অবশ্য দলীয় চাপে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা প্রকাশ্যে বলছেন না ওই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি এলাকা দুই উপজেলা সরাইল ও আশুগঞ্জ দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। উপনির্বাচনের পর স্বল্প সময়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

মাহবুবুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই স্বল্প সময়ের জন্য ভাঙা নির্বাচন করতে চাইছি না। আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমি।’

এ বিষয়ে শাহজাহান আলম বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমার আশা ছিল, প্রত্যাহারের সময়ের মধ্যে দল কোনো সিদ্ধান্ত দেবে। কিন্তু দলীয় প্রার্থী রাখার সিদ্ধান্ত না আসায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, গতকাল (শুক্রবার) বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের হালদারপাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ডাকা হয়। এ সময় জেলা সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, জেলা সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ঘণ্টাখানেক বৈঠক করে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেন। এটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

তবে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী স্বতন্ত্র তিন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করার কথা অস্বীকার করেন।

তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়া তিনজনের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, জেলা আওয়ামী লীগ ও সরকারের বার্তা পেয়ে তিন প্রার্থী নিজেদের মতো করে ঢাকায় বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো সবুজ সংকেত পাননি, বরং সব পর্যায় থেকেই শনিবারের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশনা পান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের বার্তা খুব কঠোর।

উকিল আবদুস সাত্তার প্রার্থী হওয়ার আগে বিএনপির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে বিএনপিও তাকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করে।

Pin It