আগামী নির্বাচন মডেল হবে, প্রত্যাশা রওশন এরশাদের

image-693074-1688669835

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ বলেছেন, আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে খুব বেশি সময় নেই। এর মধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। দশকের পর দশক ধরে দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা, সংঘাত ও প্রাণহানির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকুক, আমরা তা চাই না। অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে একটি ‘মডেল নির্বাচনে’ পরিণত করবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর সংসদের অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান স্পিকার।

রওশন এরশাদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র বক্তব্য দিয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে— অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। সব দলকে নির্বাচনমুখী করাই হবে নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হন, এটাই এখন দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হবে জনগণের প্রত্যক্ষ মতের ভিত্তিতে। নির্বাচন কমিশন সম্মানিত নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করবে। নাগরিকদের মতপ্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে ভোট। এই ভোট ব্যবস্থার আয়োজন, গ্রহণ, ভোট গণনা, ফল প্রকাশ করার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইসি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনকালীন অনেক ক্ষমতাও দিয়েছে রাষ্ট্র। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন সরকারের কাছে যে কোনো সহায়তা চাইতে পারে এবং সরকার তা দিতে বাধ্য। অতএব ইসি নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায়।

রওশন বলেন, দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের এখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। সবচেয়ে বেশি বেগতিক অবস্থায় রয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত।

তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতির পেছনে ভূ-অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা না কাজ করছে, এর চেয়ে বেশি কাজ করছে অসাধু সিন্ডিকেটদের নৈরাজ্য। প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহৃত কাঁচা মরিচ, আলু, ডিম তো আর ইউক্রেন বা রাশিয়া থেকে আসে না। তাহলে এগুলোর দাম বাড়ায় কে?

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ এতটাই ভয়াবহ যে, এটি যে কোনো দেশ, এমনকি বিশ্বের গতিপথ বদলে দিতে পারে। তাই যৌক্তিক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার পাশাপাশি নজর দিতে হবে এসব সুযোগ সন্ধানীর দিকে, যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। বিপদে ফেলে দিচ্ছেন পুরো দেশ ও জাতিকে।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এবারের বাজেট তিনটি কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্ব-পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক নানাবিধ বিধি-নিষেধ আরোপের ঘটনা ঘটেছে। সরকার বাধ্য হয়ে আইএমএফের ঋণ গ্রহণ করেছে। এখন আইএমএফের সংস্কারের শর্ত পূরণ একটা নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, নানাবিধ কারণে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ডলার সংকট। টান পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজারে অনিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট এবং কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে স্বল্প ও মাধ্যম আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দ্রুত বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

রওশন এরশাদ বলেন, সরকারের সুষ্ঠু নজরদারি আর দৃঢ় পদক্ষেপের অভাবে খুচরা ব্যবসায়ীরাও অযৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করছেন। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে প্রতিটি ভোগ্যপণ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। যাদের কিছু সঞ্চয় আছে, তারা তাও ভেঙে ফেলছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। ফলে যতই উন্নয়নের কথা বলা হোক, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা যদি সহজ না হয়, সাধ্য ও আয়ত্তের মধ্যে না আসে, তাহলে এসব উন্নয়ন অনেকের কাছেই অর্থহীন হবে। তাই মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ডেঙ্গু রোগের অকাল প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। চলতি বছর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৮ শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। বিগত বছরে একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৩১০ জন। গত বছর এই সময়ে কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু না ঘটলেও এ বছর বেশ কয়েকজনের মৃত্যু ঘটেছে।

Pin It