ড. ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ

image-713417-1693585952

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদে দেশের ১৭১ বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন দেশের কয়েকজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যের লেখা খোলা চিঠি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই খোলা চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত চলমান মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসাবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উল্লি­খিত খোলা চিঠির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন সামনে চলে আসে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(৪) অনুযায়ী বিচারকরা তাদের বিচারিক কাজে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত কারোরই বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার নেই।

দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, উল্লি­খিত চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) স্বীকৃত শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। এই চিঠিতে ‘নিরপেক্ষ’ বিচারকের মাধ্যমে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে বিচারের যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে হেয়প্রতিপন্ন করার শামিল বলে আমরা মনে করি।

আরও বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকই আইনের দৃষ্টিতে সমান। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই সংবিধানে সবারই আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

উল্লে­খ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারকার্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ও স্বাধীনভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে ‘বিচারিক হেনস্তা’র অভিযোগ অমূলক ও অনভিপ্রেত। পাশাপাশি ড. ইউনূস বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে সব সময়ই দেশে ও বিদেশে ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। প্রেরিত খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিদের নিজ নিজ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আমরা প্রত্যাশা করি, বিবৃতিদাতারা তাদের নিজ নিজ দেশের মতো বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকেও নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলার সুযোগ দেবেন এবং সম্মান করবেন।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, নগর পরিকল্পনাবিদ ও সাবেক চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন; অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান, ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক; শিল্পী হাশেম খান, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক বুলবন ওসমান, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, সাবেক সভাপতি, এশিয়াটিক সোসাইটি ও সভাপতি, বিশ্ব শিক্ষক পরিষদ; অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ইতিহাসবিদ, বঙ্গবন্ধু চেয়ার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস; শাহাবুদ্দিন আহমেদ, শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা; ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন; অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, সভাপতি, অর্থনীতি সমিতি; হাসান ইমাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব; রামেন্দু মজুমদার, নাট্যব্যক্তিত্ব; কবি নির্মলেন্দু গুণ; অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার, প্রেসিডেন্ট, এশিয়াটিক সোসাইটি; নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, সাবেক সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট; অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক উপাচার্য; মমতাজউদ্দীন আহমেদ, সাবেক বিচারপতি; অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন; অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, ইতিহাসবিদ; বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ আলী জহির; অধ্যাপক ড. একেএম মনোয়ার উদ্দিন আহমদ, অর্থনীতিবিদ; মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব; অ্যারমা দত্ত, মানবাধিকারকর্মী; রোকেয়া কবীর, নারীনেত্রী; আবেদ খান, সাংবাদিক; নূহ আলম লেনিন, কবি ও লেখক; হারুন হাবীব, সাংবাদিক; প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. শামীম বসুনিয়া; কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন; অভিনেত্রী লাকী ইনাম; কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য; মানজারে হাসিন মুরাদ, চলচ্চিত্রকার; লায়লা হাসান, নৃত্যশিল্পী; মোহাম্মদ হামিদ, নাট্যজন; মফিদুল হক, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদ জায়া; মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাংবাদিক; নাঈমুল ইসলাম খান, সাংবাদিক; মমতাজ উদ্দীন ফকির, সভাপতি, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি; মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ; মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার; মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন; অজয় দাশগুপ্ত, সাংবাদিক।

Pin It