বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত দুর্গাপূজার তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয় শেষ আনুষ্ঠানিকতায়।
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার বিজয়াদশমীতে দর্পণ বিসর্জনসহ দেবী বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা ছিল। এ সময় ঢাক-শঙ্খধ্বনি, মন্ত্রপাঠ, উলুধ্বনি আর অঞ্জলি চলে। ধান-দূর্বা, মিষ্টি, আবির দিয়ে ভক্তরা দেবীকে বিদায় জানান।
এদিন একদিকে ছিল বিদায়ের সুর, অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, বনানী, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন মণ্ডপে চলে আনন্দ-বিষাদে বিদায় উৎসব। ‘মা তুমি আবার এসো’- ভক্তকণ্ঠের এই আকুতি ছিল ভক্তকুলে।
পুরাণ মতে, বিজয়াদশমীর অন্যতম আয়োজন ‘দেবীবরণ’। রীতি অনুযায়ী, সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। বীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান, পরে একে অন্যের সিঁথি ও মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে দেবীকে বিদায় জানান, যা সিঁদুরখেলা নামে পরিচিত। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এদিনের সিঁদুরখেলা ছিল চোখে দেখার মতো।
এবারের দুর্গাপূজা বিজয়া শোভাযাত্রাকে ঘিরে উৎসাহ আর উদ্দীপনার ঢেউ খেলে যায়। বিকাল ৪টার দিকে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা শুরু হয়। এ সময় শতাধিক ট্রাক প্রতিমা নিয়ে সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। ঢাকেশ্বরী থেকে শুরু হয়ে পলাশী মোড় হয়ে শোভাযাত্রাটি হাইকোর্ট, গোলাপ শাহ মাজার, কোর্ট এলাকা হয়ে সদরঘাট পৌঁছে। প্রতিটি ট্রাকে দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমাও ছিল। সেই সঙ্গে ছিল উৎফুল বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ। তারা নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রাকে আরও বর্ণিল করে তোলেন। শোভাযাত্রার সময় রাস্তায়, বিভিন্ন ভবনে পুলিশ ছিল সতর্কাবস্থায়। রাস্তার দুপাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিকালে বুড়িগঙ্গার দুই তীরে হাজারও ভক্ত ও দর্শনার্থী প্রতিমা বিসর্জন দেখতে ভিড় করেন। অনেকে প্রতিমা বিসর্জনের সময় নদীতে নৌকায় চড়ে আনন্দ করেন। এ উপলক্ষ্যে ওয়াইজঘাট এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে শান্তিজল আনা হয়।
শুক্রবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজা আর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়েন।