দেশব্যাপী ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের ৫ হাজার ৩৬০টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ৩৯৭টি ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অবকাঠামোগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি ৩ লাখ টাকা।
এ সময় গণভবনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ দেশব্যাপী ১০১টি প্রান্তে সুবিধাভোগীরা যুক্ত ছিলেন।
এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ২৫৯টি ভবন; প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ২ হাজার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চট্টগ্রাম বন্দর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দরের ১৫টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রভৃতি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নির্মিত সরকারি স্থাপনার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়, কক্সবাজারস্থ ১০তলা বিশিষ্ট লিডারশিপ ট্র্রেনিং সেন্টার এবং চারটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের (পিটিআই) নবনির্মিত মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম।
প্রায় ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়গুলোতে ৬ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী নতুন ও আকর্ষণীয় শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণের সুবিধা পাবে। এছাড়া, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন নবনির্মিত এ বিদ্যালয়সমূহের সুবিধা পাবেন; নবনির্মিত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জেন্ডারের ভিত্তিতে পৃথক ওয়াশ ব্লক নির্মিত হয়েছে এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প
প্রায় ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৭৮ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে মাঠ পর্যায়ে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। বেইজমেন্ট ও ক্যাম্পাসে ৪৪টি গাড়ি রাখার সুবিধা রয়েছে।
প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারস্থ ১০তলা বিশিষ্ট লিডারশিপ ট্র্রেনিং সেন্টারে প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ট্রেনিং সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে। নবনির্মিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের সকল স্তরের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের জন্য চাহিদা ভিত্তিক, আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ভবনে ১৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীর (৮০জন পুরুষ ও ৮০ জন মহিলা) আবাসনের সুব্যবস্থাসহ প্রশিক্ষণের আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।
সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও যশোরে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি পিটিআই এ মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৫০ আসন বিশিষ্ট প্রতিটি অডিটোরিয়ামে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণসহ শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রত্যেক পিটিআই এ প্রতি বছর ২ শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী দীর্ঘ মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও, সেখানে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়।
নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প
উদ্বোধনকৃত প্রকল্পগুলো হলো- চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, বে টার্মিনাল (মাস্টার প্ল্যান), বাংলাদেশ স্থলবন্দরের ধানুয়া কামালপুর স্থল বন্দর (জামালপুর), রামগড় স্থল বন্দর (খাগড়াছড়ি), বিআইডব্লিউটিসির ছয়টি ইমপ্রুভড মিডিয়াম ফেরি, বিআইডব্লিউটিএ’র মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশ বিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদীর অংশ বিশেষের নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার; পুরাতন ব্রম্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ধরলা নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে খনন; ঢাকা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের লক্ষ্মীপুর প্রান্তে মেঘনা নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নৌচলাচল সহজিকরণ; ধাওয়াপাড়া (রাজবাড়ী) ও নাজিরগঞ্জ (পাবনা) ফেরি সার্ভিসসহ নদীবন্দর কার্যক্রম। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকৃত প্রকল্পগুলো হলো- বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১ এর আওতায় পানগাঁও কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ; আশুগঞ্জ কার্গো টার্মিনাল; বরিশাল নদী বন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল; চাঁদপুর নদী বন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল; নারায়ণগঞ্জ ডেক ও ইঞ্জিন কর্মী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; নারায়ণগঞ্জ খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ।