করোনার যাতনা ও মাহফুজ রহমানের বই ‘গুল্টু’

kidz-book-25320-01

করোনা অনুজীবের আক্রমণের আতঙ্কে নিজকে নিজে বাড়িতে সঙ্গবিযুক্ত করে রেখেছি। বিভিন্ন সময় ভেবেছি কোনো কাজ না করতে হতো যদি তাহলে পড়ে-টড়ে নিজেকে একবারে বিদ্যা দিগ্গজ বানিয়ে ফেলব! কিন্তু কপাল! বাস্তবতা দেখছি ভিন্ন !

টানা তিন দিন একবারও বাড়ির বাইরে যাইনি। আগের তিন দিনে বারদুয়েক বের হলেও তা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য; এবং যতদূর সম্ভব করোনা সতর্কতা মেনে। কিন্তু এই ছয় দিনে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু তো পড়তে পারিনি! এমনকি ভালো লাগেনি কারো সঙ্গে কথা বলতেও। কেবল সামাজিক মাধ্যমে, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে চোখ রেখেছি করোনা সংক্রান্ত খবর জানার জন্য। যা কিছু পড়েছি তাও করোনা নিয়ে। যার সঙ্গেই অল্পবিস্তর কথা হয়েছে তারও প্রায় পুরোটাই ভরা থাকে করোনা প্রসঙ্গে।

২.

গতকাল ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনের সঙ্গে ফোনে কথা হলো। করোনার আতঙ্ক বা অস্বস্তি নিয়ে রিটন দুদিন আগে মাত্র বাংলাদেশ থেকে ফিরেছে। জেটল্যাগ কাটিয়ে ফোন করল আমার খবর নেয়ার জন্য! দু-এক কথার পর প্রসঙ্গ উঠল সেই করোনারই! একটা দামি কথা বলল রিটন। বিশ্বজোড়া সমস্যা এটা। আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য এর কিছুই করতে পারবে না। উল্টো আমার অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা। তাই আমি ঠিক করেছি করোনা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে সৃষ্টি হওয়া অসঙ্গতিগুলোকে নিয়ে দু-একটা ছড়া লিখব; আর বই পড়ব। প্রচুর লিখব। রিটনের সঙ্গে কথা বলা মানেই প্রচুর হাসি-ঠাট্টায় ডুবে যাওয়া। বকুল আর আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাসলাম প্রাণখুলে! তারপর ভাবলাম কিছু একটা লিখতে বসব। রিটন বড়দের জন্য নানা মাধ্যমে লেখালিখি করলেও প্রধানত ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক।

আমার টেবিলে মাহফুজ রহমানের ছোটদের কবিতার বই ‘গুল্টু’। সুতরাং ‘গুল্টু’ নিয়েই লেখা যাক! এবারের বইমেলায় ছোটদের বইয়ের প্রকাশক ‘ময়ূরপঙ্খি’ বইটির প্রকাশক। লেখক মাহফুজ রহমান স্বয়ং যত্ন করে আমার নাম লিখে বইটা আমাকে উপহার দিয়ে গেছে। ও লিখেছে, ‘প্রিয় মানুষ প্রিয় লেখক মাযহার ভাইকে ভালোবাসাসহ’–মাহফুজ রহমান। যেমন ভালোবাসায় মাখিয়ে আমাকে বইটা উপহার দিয়েছে তেমনই চমৎকার এর সামগ্রিক অঙ্গসজ্জা। আবার তেমনই ভালো তার ছাপার মান! এমন একটা বই হাতে পেলে মনটা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়! প্রথম দৃষ্টিতেই মনে হয়, ছোটদের বই এমনই হওয়া উচিত! নিউ ইয়র্কে ফেরার জন্য ব্যাগ গোছাতে গিয়ে মাহফুজ রহমানের বইটা রেখে আসতে পারলাম না। বইটা হাতে পাওয়ার পর উল্টেপাল্টে দেখেছিলাম আগেই। একদিন মাহফুজ রহমানের সঙ্গে দেখা হলে ওকে জানিয়েছিলামও সে কথা। ‘গুল্টু’ বইটা দেখে মনে হলো এটা নিয়েই লিখি কিছু।

৩.

শিশুসাহিত্য নিয়ে আমার বসবাস সেই লেখালিখি শুরুর পর্যায় থেকে। শিশুসাহিত্য আমার নিশ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে আছে। ‘গুল্টু’র সঙ্গে কাটানো যাক তাহলে কিছুটা সময়! বইটা হাতে নিয়ে প্রথম চমক–এর ছবি এঁকেছে দেখছি মাহফুজ রহমান স্বয়ং। ও যে এত ভালো ছবি আঁকে সেটা আগে খেয়াল করিনি তো! চারপাশের কতকিছুই না আমাদের দৃষ্টিসীমানার বাইরে পড়ে থাকে! ধীরে ধীরে মনে পড়ল ফেইসবুকে বা কোথাও ওর আঁকা একটা ছবি আমি আগেও দেখেছি। কিন্তু ওর ছবি আঁকার ইতিহাস জানা না থাকায় মনোযোগ দিইনি। এখন পুরো বইটা উল্টেপাল্টে দেখে বুঝতে পারছি ছবি আঁকায়ও ওর আবেগের গভীরতা আছে। ছবি আঁকতেও সে আনন্দ পায়। এটা তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার! ‘গুল্টু’র কবিতাগুলোর সঙ্গে ওর আঁকা ছবির বৈশিষ্ট্য নিয়ে পরে কথা বলব। সেই সঙ্গে বলব আমার প্রত্যাশার কথাও! আগে কবিতাগুলো নিয়ে কথা বলে নিই!

৪.

বইটাতে কবিতা আছে মোট ১৭টি। হ্যাঁ, যাঁরা বইটা আগেই পড়েছেন তাঁরা হয়তো বলতে পারেন আমি বইটাকে ছড়ার বই বলছি না কেন? এই বইয়ে কি ছড়া নেই? সঙ্গত প্রশ্ন! এটার অপোনোদন করা আগে জরুরি মনে করছি। হ্যাঁ, আমি মনে করি ছড়া হচ্ছে বিশেষ এক ধরনের কবিতা–যে কবিতা প্রধানত ছোটদের ভাবনার ও কল্পনার জগৎ নিয়ে লেখা হয়। শুধু তাই নয়, ছড়াকার আমীরুল ইসলামের তত্ত্ব ধার করে বলি, ছড়া হচ্ছে সেই ধরনের কবিতা যাতে থাকে বিশেষ বাকভঙ্গি। তাই বিশেষ বাকভঙ্গি সম্পন্ন কবিতা ছাড়া, সরল অর্থে ছন্দোবদ্ধ পদ্যমাধ্যমে লেখা কবিতাও যেহেতু আছে তাই সব মিলিয়ে ‘গুল্টু’কে ছোটদের কবিতার বই হিসেবেই চিহ্নিত করে রাখছি। এ নিয়ে আরো বিভিন্ন লেখায় বিস্তার করেছি বলে এখানে বিশেষ আর কিছু বলছি না।

এখানে কবিতার সংখ্যা মাত্র ১৭টি হলেও বৈচিত্র্য আছে। মাহফুজ কল্পনাশক্তিরও পরিচয় দিয়েছে। ছোটদের মনের জগৎ নিয়ে খেলাও খেলেছে ভালোই। প্রথম কবিতার কথাই ধরি না! এতে একটা ছোট্ট গল্প আছে। গল্পটা এরকম–সাতের নামতা গুলে খেতে গিয়ে হাতির নাতির দাঁতের মাড়ি ফুলে গেছে; মুলার মতো দাঁতে চুলার কয়লা ঘষেও লাভ হয়নি; মাঘের শীতেও নাতি কাবু বলে রাগে সকল জ্বালা ভুলতে ইশকুলে তালা দিয়ে দেয়। ছোট্ট এই কৌতুকপ্রদ গল্পটাকে ছন্দের দোলায় ভালোই জমিয়েছে মাহফুজ। এখানে কল্পনার ধরন অবশ্য খুব নতুন নয়। দ্বিতীয় কবিতায় কৌতুকরস দিলেও তার আড়ালে বিষণ্ণতা সৃষ্টি করেছে মাহফুজ। শেষটা আবার মিলনাত্মক করে দিয়েছে আলাদা আনন্দ আর জাগিয়েছে চমক! ছাদের তারে শুকাতে দেয়ায় ঝুলতে থাকা একজোড়া মোজাকে দুই ভাই কল্পনা করা হয়েছে এখানে। তারপর রাতের ঝড়ে উড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক মোজা পড়ে যায় পাশের বাগানবনে। সকাল বেলা মানুষ এসে যখন দেখে একটি নেই তখন আরেকটিকেও ফেলে রেখে চলে যায়। তারা দুই ভাই একে অপরকে খুঁজে খুঁজে দুঃখে কাঁদে। দুপুরবেলা আরেকটা ঝড় এলে তাতে উড়তে উড়তে ভাইকে খুঁজতে গলা ছেড়ে ছোটবেলায় যে গান গাইত সে গান গাইতে থাকে। পাশের বাগানবনে পড়ে থাকা অন্য মোজাটি তখন সাড়া দেয়, ‘ওটা কে রে?’

‘ফুল ফুটল মাথায়’ নামে আরেকটা কবিতা আছে এই বইয়ে। সেটা ওলা নামের এক কম্পিউটারকে নিয়ে। সে কম্পিউটার আবার অভিমানী। কম্পিউটারের মালিক তার মাথায় গোবর ভরা আছে বলায় সে মর্মাহত হয়ে সেখানে চারা লাগিয়ে দেয়। তাতে জুনমাসে গাঁদা ফুল ফোটে। গল্পটার কৌতুকরস বেশ মজার লাগে। এখানে আবার মাহফুজ দেখিয়েছে আরেক ধরনের দক্ষতা। সেটা হলো নজরুলের ‘লিচু চোর’ কবিতার ছন্দকে ভিন্ন গল্পে ব্যবহারের মজা দিয়েছে সে।

‘গুল্টু’ নামের কবিতাটা নিয়ে একটু বলি। টুনি নামের মেয়েটি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে তাকে ঘষে দিয়েছে। ‘গুল্টু’ নামের এক দৈত্য এল তার হুকুম তামিল করতে। বেশি কিছু চায়নি টুনি। বলেছে ব্যাগটা যদি গুল্টুদৈত্য কাঁধে নেয় তাহলে বাড়ি গাড়ি পুতুল ঘোড়া–এসব বহন করার কষ্ট থেকে সে বাঁচে! দৈত্য হুকুম তামিল করবে কী! মাফ চেয়ে বলে, ‘ভাঙবে কোমর’, ব্যাগটা দেখেই নাকি তার জ্বর এসেছে, নাপা খেতে হবে!

লিখতে গেলে এমনি করে ১৭টা কবিতার প্রত্যেকটি নিয়েই লিখতে হবে। কারণ সবগুলোতেই এমনি রকম মজা করার ক্যারিশমা দেখিয়েছে মাহফুজ! এতগুলো নিয়ে লিখলে তো আমি আরেকটা বইই লিখে ফেরতে পারি ‘গুল্টু’ নিয়ে। তাই বাকিগুলোর সম্পর্কে কিছু লিখলাম না। তবে এ কথা বলতে পারি বড়রা আগে পড়ে নিজেরা এর মজা নিয়ে তারপর ছোটদের মজা পাওয়ার জন্য তাদের কাছে এর জন্য ওকালতি করতে পারবেন।

৫.

মাহফুজ রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল বছর দশেক আগে। ওর সঙ্গে পরিচয় হবার পেছনেও ঘটনা আছে। কে যেন ওকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল তা এখন মনে নেই। মাহফুজ মনে করিয়ে দিতে পারে। আমাকে এসে বলল, ছেলেটির নাম মাহফুজ রনি। সে নাকি আপনার গল্প পড়ে মুগ্ধ! আমি তো অবাক! চর্মচক্ষে আমি আমার গল্পের পাঠক দুই-একটার বেশি দেখিনি! সেখানে কিনা জ্বলজ্যান্ত একটা পাঠক! এমন পাঠকের কথা ভুলি কী করে! ওর সঙ্গে কথা হলো দুচারটে। বলল, আমার ‘অল্প কিছু গল্প’ নামের বইটা সে কিনেছে। তার ভালো লেগেছে বইয়ের গল্পগুলো। আরো দু-এক কথায় বুঝলাম সে খুব সোজা লোক নয়। শিশুসাহিত্য নিয়ে ওর নিজের মতো করে চিন্তা-ভাবনা করেছে। আমার তখন মনে হলো, এই তো আমি লোক পেয়ে গেছি ছোটদের বইয়ের আলোচনা লেখার! আমি তখন বই-সমালোচনার পত্রিকা ‘বইয়ের জগৎ’ বের করছিলাম। ভালোবেসে ছোটদের বইয়ের আলোচনা করার লোক পাচ্ছিলাম না। আমি ওকে বললাম, নিজের বইয়ের আলোচনার কথা তো আর নিজের পত্রিকায় দেয়া শোভন দেখায় না! তুমি বরং তোমার কাছে ভালোলাগা ছোটদের অন্য একটা বই নিয়ে লেখ। লেখক সম্পর্কে দুচার কথায় পরিচয় দেবে। বইটা কী বিষয়ে লেখা বা কেমন ধরনের তা লিখবে। বইটার অন্যান্য যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা তোমার ভালো লাগল বা ভালো লাগল না তাও উল্লেখ করবে। ছোটদের লেখার কাছে তোমার কী চাওয়া তা-ও উল্লেখ করতে পার। মোটকথা একটা ভালোলাগা বই নিয়েই লিখতে হবে।

মাহফুজ রনি আমার কথা রাখল। সে নিয়ে এল জাহীদ রেজা নূরের ‘রাশিমনি হাজংয়ের মালা’ বইটা নিয়ে আলোচনা। আলোচনা পেয়ে আমি খুশি হয়ে উঠেছিলাম। কারণ ছোটদের বই নিয়ে আলোচনা করার তেমন কেউ নেই বাংলাদেশে। পরেও মাহফুজ একটা লেখা বোধহয় লিখেছে ‘বইয়ের জগৎ’-এর জন্য। কিন্তু তারপর ওর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের মাত্রা কমে গিয়েছে। টেলিফোন করেও তাকে ধরতে পারিনি। হঠাৎ দু-একবার ফেইসবুক ম্যাসেনজারে উঁকি দিয়েই ডুব মেরেছে। বহুদিন পর এবার বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় মাফুজ রনি ‘গুল্টু’ নিয়ে এসে মাহফুজ রহমান হয়ে আমার সামনে ধরা দিল। প্রথম আলোয় কাজ করে রনি। তো তাদের নিয়মনীতির ধাক্কায় ‘রনি’ শব্দটা খসে গেল, পৈত্রিক রহমানের আগম ঘটল। ভালোই হয়েছে। একজন লেখককে তো আর চিরকাল বাচ্চা থাকলে চলে না! পরিণত বয়সে বচ্চা নামে ডাকতে কারও কারও ভালো নাও লাগতে পারে।

‘গুল্টু’র আগেই ওর তিনটা বেই বেরিয়েছে। তিনটাই গদ্যের। ও যে ছোটদের কবিতা লেখে সেটা জানা ছিল। একআধটা পড়েছিও। কিন্তু মনোযোগ তো আর যায়নি অতটা। ফলে ভালো করে জানতাম না। খোঁজ করে দেখলাম ‘শীতবুড়োর কি ঠান্ডা লেগেছিল’ নামে ২০১১ সালেই ‘শুদ্ধস্বর’ থেকে বেরিয়েছিল ওর ছোটদের গল্প-সংকলন, ২০১৩ সালে ‘শুভ্রপ্রকাশ’ থেকে বেরিয়েছিল ‘ভূতুড়ে টিলায় খ্যাপা ক্লাব’ নামে কিশোর-উপন্যাস এবং ২০১৭ সালে ‘পরি আর ভাইরাস’ নামে কমিকস আর ছবির গল্পের বই। একটা ব্যাপার ভালো লেগেছে যে ও ছোটদের লেখার ব্যাপারে বেশ সচেতন। কোনটা কিশোরদের, কোনেটা আরো ছোটদের সেটা বুঝে সে তার বই বানিয়েছে। সুযোগ পেল বলেই যেন তেন প্রকারে বই বের করে ফেলল না। মনে পড়ল, ও যে খুব সচেতন একজন লেখক তার পরিচয় তো ছোটদের বইয়ের আলোচনা থেকেই বুঝেছিলাম। এবারে আসি ওর আঁকা ছবির কথা। ও যে এতো ভালো আঁকে তা দেখে তো আমারই লোভ হচ্ছে আমার পরের ছোটদের কবিতার বইটার ছবি ওকে আঁকতে বলব।

ইংরেজিতে ড্রয়িং, পেইন্টিং আর ইলাস্ট্রেশন তিনটা শব্দ তিন ধরনের কাজ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। বাংলায় তেমন ভিন্ন ভিন্ন প্রতিশব্দ নেই। তার মানে এই তিন ধরনের কাজকে যে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে সে কথা আমাদের বই-পত্রের জগতের মানুষেরা হয়তো বেশি ভাবেননি। আমি তো ভাবনায় পড়ে গেলাম! মাহফুজ রহমানের ‘গুল্টু’ একই সঙ্গে ইলাস্ট্রেশনেরও বই! আমেরিকার ছোটদের বইয়ের দোকানে দেখেছি অনেক বইয়ের ‘অথর’ একই সঙ্গে লেখক ও চিত্রশিল্পী! তাঁদের দুজনের নাম একই মাপের টাইপফন্টে লেখা হয়। এরকম বই বাংলাদেশেও কয়েকটি বেরিয়েছে। এখন সেই ইতিহাসে যাবার সময় নেই। তবে বলতেই হয় এমন নিদর্শন খুব বেশি নেই! ‘গুল্টু’র ইলাস্ট্রেটর মাহফুজ রহমানও বিশিষ্ট। ছবির কল্পনাশক্তিতে ও যেমন বিশিষ্ট ওর গ্রাফিক্সজ্ঞানও তেমন পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত। বাংলাদেশের শিশুরাও যে এখন উন্নত দেশের কার্টুন ছবি দেখে দেখে তাদের রুচির উন্নতি ঘটিয়ে ফেলেছে আমাদের চিত্রশিল্পীদের মধ্যে খুব কমেরই এই বোধ আছে। প্রকাশকদের কথা কী আর বলব! এখনকার ছোটদের রুচির কাছে পৌঁছতে পারার সামর্থ্যঅলা প্রকাশক আর কয়জন আছে! এ ক্ষেত্রে অবশ্য ময়ূরপঙ্খি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। তাদের আরো বই আমি দেখেছি। লেখায় আঁকায় ও ছাপায় বেশ ভালো মানের বই তাঁরা প্রকাশ করতে পারছেন।

৬.

আমার কথা ফুরোচ্ছে না। না ফুরোলেও এখন থামিয়ে দিতে হবে। তবে থামার আগে মাহফুজ রহমানকে অনুরোধ করব ‘লেখা’ আর ‘ছবি’ দুইয়ে মিলে এক একক হবে এমনটা ধরে নিয়ে ছোটদের জন্য তুমি কিছু বই বানাও! এমন সামর্থ্য নিয়ে কিছু করতে পারার মানুষ পাওয়া বিরল আমাদের দেশে। এই গুণ তোমার আছে। এটা বিবেচনায় রেখে আমার এই অনুরোধটুকু রেখ ভাই! আরো একটা কথা! কেউ অনুরোধ করলেই তার বইয়ের জন্য ছবি আঁকতে বসে যেও না যেন। যে বইয়ের লেখা তোমার মনে ছবির কল্পনা জাগিয়ে তুলবে অথবা যে লেখাকে তুমি ছবিতে উত্তীর্ণ করতে পারবে সেই বইয়ের জন্যই আঁকবে তুমি! এই শর্ত যদি না মেলে তাহলে আমার অনুরোধও রেখ না তুমি! এটা আমার উপদেশ নয়, বাংলাদেশের ছোটদের পক্ষ থেকে অনুরোধ! মাহফুজ রহমানের বইটার সবগুলো লেখা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের ধাওয়া মনঃসংযোগ ধরে রাখতে দিচ্ছে না। এরই মধ্যে টেলিফোন কয়েকবার তাকে ঝামেলায় ফেলেছে। পরে ভেবে দেখলাম পাঠকদের জন্য ‘গুল্টু’র বাকি লেখাগুলোকে রেখে দিই। তাঁদের নিজেদের মতো করে বইটা পড়তে হবে না! সবটাতে যদি আমার ভাবনা চাপিয়ে দিই তাহলে হবে কী করে!

৭.

‘গুল্টু’ পড়তে পড়তে ভেবে দেখলাম শিশুসাহিত্যের প্রতি মাহফুজ রহমানের রয়েছে অনেক ভালোবাসা। আর সেই জন্যও তার প্রতি রইল আমার ভালোবাসার অশেষ!

২৩-২৪ মার্চ ২০২০

Pin It