অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ কমাতে এবার বিশেষ কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খেলাপি ঋণ কেন বাড়ছে এবং কমানোর উপায় নিয়ে সুপারিশসহ দ্রুততম সময়ে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আটটি বিভাগ প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করবে। যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দুই অঙ্কের ওপরে রয়েছে, তাদের এক অঙ্কে নামাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে এ রকম সাতটি ব্যাংককে মঙ্গলবার বৈঠকে ডাকা হয়।
ওই ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী এবং বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ এবং কমানোর জন্য কী ভাবছে তা নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান ও আহমেদ জামাল, তিনজন নির্বাহী পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সংশ্নিষ্টরা জানান, খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এ রকম ঘোষণা সত্ত্বেও গত মার্চ প্রান্তিক শেষে রেকর্ড পরিমাণে খেলাপি ঋণ বেড়ে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজর ৯১১ কোটি টাকা। তিন মাসে বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। এর আগে এক প্রান্তিকে এত বেশি খেলাপি ঋণ বাড়তে দেখা যায়নি। আবার আগে কখনও এক লাখ কোটি টাকা ছাড়ায়নি। এ নিয়ে সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে, বৈঠক থেকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন অফসাইট সুপারভিশন, ব্যাংক পরিদর্শনে নিয়োজিত চার বিভাগ, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস এবং ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপকরা। খেলাপি ঋণ কেন বাড়ছে, কোন পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ কমানো যায়- এসব নিয়ে তারা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সুপারিশসহ দ্রুততম সময়ে গভর্নর বরাবর জমা দেবেন। মহাব্যবস্থাপকরা কমিটির সদস্য হলেও এসব বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রতিবেদন তৈরিতে সার্বিকভাবে সহায়তা করবেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। গত প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে এ রকম কয়েকটি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কেন বেড়েছে, পরবর্তী প্রান্তিকে কীভাবে কমাতে পারে- এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।